শিল্পী সহায়তা নিয়েও স্বজনপ্রীতি মাদারীপুরে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:১১ এএম
স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড -৪১
ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ জনপদ মাদারীপুরের নাম প্রাচীনকালে ছিল ইদিলপুর। পঞ্চদশ শতাব্দীতে পীর-আউলিয়াদের মধ্যে সাধক বদরুদ্দিন শাহ মাদারের নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়। ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় মাদারীপুর। এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে হজরত শাহ মাদারের দরগাহ, আলগী কাজি বাড়ি মসজিদ, রাজা রাম মন্দির, ঝাউদি গিরি, আউলিয়াপুর নীলকুঠি, মিঠাপুর জমিদার বাড়ি, বাজিতপুরে প্রণব মঠ, খোয়াজপুরে মঠের বাজার মঠ, খালিয়া শান্তিকেন্দ্র, পর্বতের বাগান, শকুনী দীঘি, সেনাপতির দীঘি, চরমুগরিয়া (প্রাচীন বন্দর ও বানরের রাজ্য)। সমৃদ্ধ এই জনপদও করোনার আঘাতে ম্লান হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, মাদারীপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশটি। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় পাঁচশর মতো। তাদের অনেকে পেশায় তবলা, সংগীত, গীটার, নৃত্য শিল্পী, বাউল শিল্পী ও প্রশিক্ষক। যারা সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান করে জীবিকা নির্বাহ করেন, এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ১০০ জনের তালিকা পাঠানো হলেও সহায়তা দেয়া হয়েছে ৬০ জনকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই কাটছে অর্থনৈতিক দুর্দশায়। কেউবা গোয়ালের গরু বিক্রি করে বাঁচার শেষ চেষ্টা করার কথা ভাবছেন। অথচ শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতি কর্মকর্তা তার খাতিরের লোকজনকে সহায়তা দিয়ে স্বজনপ্রীতি করেছেন।
জানতে চাইলে শিল্পী মোহাম্মদ সোহান হাওলাদার ভোরের কাগজকে বলেন, মাদারীপুরে করোনার প্রভাব বেশি হলেও সহায়তা করা হয়েছে কম। আমার মতো আরো অনেকেই পায়নি। পেয়েছে তারাই, যারা কালচারাল অফিসারের সঙ্গে আড্ডা মারেন, যারা তার আজ্ঞাবহ এবং খাতিরের লোকজন। প্রকৃত শিল্পীরাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা পাচ্ছে না। অথচ দীর্ঘ ২৪টি বছর ধরে সংগীতকে আকড়ে ধরে আছি। এখানে শিল্পকলার কাজকর্ম কর্মকর্তার মর্জি মতই চলে। তবে এমন পরিস্থিতি আর বেশি দিন থাকবে না। আমরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবই।
পারিবারিকভাবে তিন প্রজন্ম মাদারীপুরের নৃত্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে রাখা নৃত্যশিল্পী তাসলিমা হাই ফোটন বলেন, সরকারি কোনো সহায়তা তো পাইনি। এমনকি কোনো কর্মকর্তা একবার জানতেও চাইলেন না কেমন আছি! সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মুখ চিনে চিনে সহায়তা দিয়েছেন। আমরা কি অন্যায় করেছি? করোনার শিকার তো ধনী-গরিব সবাই। উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের সভাপতি ডা. রেজাউল আমিন বলেন, সংগীত নৃত্য থেকে শুরু করে যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, তাদের আয়ের পথ এখনো বন্ধ। শুনছি করোনা পরিস্থিতি সামনে আরো বাড়বে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সংকটও বাড়বে।
প্রশিক্ষক ও শিল্পী এম এম রবি বলেন, আমার অবস্থা মোটেই ভালো নয়। অল্প কিছু জমানো টাকা তাই দিয়ে এতদিন চলেছি। এবার হয়তো দুধের গাভিটাই বিক্রি করে দিতে হবে। এছাড়া আমি আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ পেশায় আছি। অথচ আমাকে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে ভাবতেই পারিনি। তবলা শিল্পী শান্ত কুমার বলেন, একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে শিল্পীরা দেশের জন্য গান গেয়ে যুদ্ধ করেছে। এখন আমরা গান গেয়ে মানুষকে সচেতন করছি। এই দুঃসময়ে সরকার আমাদের পাশে থাকুক, এই দাবিটা করলাম। এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে মাদারীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান মিলনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।