×

সম্পাদকীয়

খুনিদের শনাক্ত করে বিচারাধীন করা হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:২১ পিএম

দেশব্যাপী আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের চার বছর আট মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। দীর্ঘ সময়ে শেষ হয়নি তদন্ত। এই সময়ে পুলিশ, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির পর এবার মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে এতদিন হতাশা প্রকাশ করলেও এবার পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ায় ঘাতক শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও বিচার পাওয়া নিয়ে আশার আলো দেখছেন তনুর বাবা-মা ও স্বজনরা। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তনুকে। তনু হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাটি দেশবাসীকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করে। ঘটনার পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলে মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। ওই বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে ৩ জনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা ব্যক্তি বলেও সিআইডি জানিয়েছিল। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি। একই সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর পুরনো বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করেন ঢাকার সিআইডির কর্মকর্তারা। এরপর থেকে তনুর পরিবারের সদস্যরা মামলার বিষয়ে আর কিছুই জানেন না এবং তদন্তকারী সংস্থাও তাদের কিছু জানাচ্ছে না বলে সাংবাদিকদের জানান তনুর বাবা-মা। এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করা হলেও দীর্ঘ এ সময়ে হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি। যা খুবই হতাশাজনক। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। বিচার প্রলম্বিত হওয়া ন্যায়বিচারকে অনিশ্চিত করে তোলে। পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, সিআইডিসহ বিভিন্ন তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা গত চার বছর আট মাস ধরে তদন্ত ও অনুসন্ধান চালালেও এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে শনাক্ত, গ্রেপ্তার কিংবা ডিএনএ ম্যাচিং পর্যন্ত করতে পারেনি। এবার পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ায় তনু হত্যার বিচার অগ্রগতি হতে পারে। আমরা চাই, তনুর খুনিরা দ্রæত শনাক্ত হোক, তাদের বিচারাধীন করা হোক। ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো তনুকে এভাবে নির্মম পাশবিকতার শিকার হতে না হয়, জীবন দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তনু হত্যাকাণ্ডের মতো সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App