×

জাতীয়

ধর্ষণে শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে বিল পাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৪৯ পিএম

ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে এবং ডিএনএ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০২০’ পাশ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের দশম ও বিশেষ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মহিলা ও শিশু ষিয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দ্রিরা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল- ২০০০’ উত্থাপণ করলে কণ্ঠ ভোটে তা পাশ হয়ে যায়।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করে বিলটি গত ৮ নভেম্বর সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। গত সোমবার সেই প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

বিলটিতে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক বলে বিভিন্ন সময় মত আসার প্রেক্ষাপটে বিলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ দিয়ে শব্দটি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। মূল আইনের ৯ (২) ধারাসহ কয়েক জায়গায় ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দটি বসানো হয়েছে। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করার দাবির মধ্যে সরকার আইনটি সংশোধনের পদক্ষেপ নেয়। সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধিত আইন কার্যকর করতে গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ জারি করেন। পরে ৮ নভেম্বর নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই দিন সেটি বিল আকারে সংসদে তোলা হয়।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় বলা ছিল, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হবেন। বিলে মূল আইনের খসড়ায় ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আইনের ৯(৪) (ক) উপধারায় ছিল, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হইবেন।’ এই উপধারা সংশোধন করে পাস হওয়া বিলে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’- এর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-’ শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে।

বিলে অপরাধের শিকার ব্যক্তির পাশাপাশি ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির’ মেডিকেল পরীক্ষা করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২(ক) শিরোনামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে বিলে। সেখানে বলা হয়, ‘এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ধারা ৩২ এর অধীন মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও, উক্ত ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ২০১৪ সালের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইনের বিধান অনুযায়ী তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রসরমান ধারা আজ বিশ্বব্যাপাী নন্দিত ও প্রশংসিত। বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ঊর্ধ্বগামী পরিক্রমণের মধ্যে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ সংঘটন, সামাজিক গতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব রাখাসহ সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের হীন অপরাধ দমনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণার্থে দ-ারোপের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ-সময় ও পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অত্যাবশ্যক। এ ধরনের অপরাধ ট্রাইব্যুণালে দ্রুত আইনের আওতায় বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। বিলটিতে বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, মোশাররফ হোসেন, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ ও রুমিন ফারহানা।

এসময় পীর ফজলুর রহমান বলেন, ২০০১ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লা পাড়ায় পুর্নিমা রানীকে বিভংসভাবে ধর্ষন করে সরকারী দলের মদদ পুষ্ট এক দল পশু। এসময় ধর্ষনের বিভৎসতা দেখে পূর্নিমা রানীর মা কেঁদে বলেন, ‘ বাবা তোমরা একে একে এসো, সবাই একসঙ্গে এলে আমার মেয়েটা মরা যাবে’ । এ থেকে বোঝা যায় ধর্ষনকারীরা কতটা নির্মমতা ও পশুত্বের পরিচয় বহন করে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, মূলত ধর্ষনের মত অপরাধ রাহনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার দম্ভ থেকে জম্ম নেয়। গত বেশ কয়েকটি ধর্ষসের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রায় সব কটিতে রাজনৈতিক কর্মীদের দারা সংঘটিত হয়েছে। একে সরকারী দলের মদদ পুষ্টদের নামে এসেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App