×

মুক্তচিন্তা

বাঁচতে হলে বাঁচাতে হলে মুক্ত হতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩২ পিএম

প্রায় রোজ মানুষ মরছে বা আক্রান্ত হচ্ছে। না করোনার কথা বলছি না। এখন নতুন রোগের নাম উত্তেজনা। তাও আবার ধর্ম নিয়ে। বিকৃতি শব্দটা হঠাৎ এত পপুলার হলো কীভাবে? এত ঠুনকো হলো কেন বিশ্বাস? কেন মনে করব সবকিছু একটা কথা বা কারো বলাতেই শেষ হয়ে যায়? কেন এ নিয়ে এত হানাহানি? মুক্তিযুদ্ধ বা আদর্শ এখন স্রেফ কথার কথা। সব রাজনীতি সব দল মিলেই এর বারোটা বাজিয়েছে। আদর্শ থেকে কতদূরে আমরা? তার আগে জানা দরকার কোন আদর্শের কথা বলছি। নয়তো গৎবাঁধা সেসব কথার মতো শোনাবে। যেমন সবাই বাচ্চাদের বলে, মানুষের মতো মানুষ হও। কিন্তু কোনো অভিভাবকের ধারণা নেই কোনজন সেই মানুষ? আমি অভিভাবকদের কাছে জানতে চাই তারা যে কথায় কথায় উপদেশ দেন, মানবিক মানুষ হও বা সততা দিয়ে বড় হও, এসব ফালতু কথার অর্থ কী? নিজেদের জীবনে যা পালন করেন না বাচ্চাদের সেগুলো বলেন কোন কারণে? আর তারা যদি কোনোদিন আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করে আমরা কার মতো মানুষ হবো? ধরুন বলল আমি কি আইনস্টাইনের মতো হবো? আপনি তো রাজি হবেন না। কারণ আইনস্টাইন ছিলেন ইহুদি। আপনাকে যদি বলে তাহলে রবীন্দ্রনাথের মতো হয়ে উঠি? তাও মানবেন না। কারণ ঠাকুর তো বিধর্মী। আর স্কুল পালানো নজরুলও তাই। বঙ্গবন্ধুর জীবনী শুনতে ভালোবাসেন হয়তো কিন্তু নিজের সন্তান ত্যাগ স্বীকার করুক এটা চান? কাজেই এসব বলে খামোখা মনের শান্তি ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। বলছিলাম আদর্শের কথা। কোনো আদর্শই একক বা চিরকালীন নয়। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাপার বা ঘটনা থাকে যা একেকটি জাতির জীবনে চিরকালের মহান ঘটনা। সেটা পুরনো হয় বটে ফুরিয়ে যায় না। আর যখন তাকে বিদায় দেয়া হয় কিংবা পুরনো বলে মনে করা হয় তখনই তাদের পরাজয়ের পথ খুলতে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতি আদর্শের ধারক হতে পারেনি। আমরা মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম জাতীয় পার্টির নামে এরশাদের সেনাশাসন গেলেই মুক্তিযুদ্ধের দেশে ফিরবে জাতি। তা তো হলোই না। বীর বাঙালি জোশ আর আনন্দে ভোট দিয়ে গদিতে নিয়ে এলো খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে। এ যেন বাপকে মেরে কাকাকে রাজা বানানো। কাকার দল এসেই বাংলাস্তান বানানোর চেষ্টায় মত্ত হলো। তারপরের ঘটনা সবার জানা। একসময় তাদের বিদায় নিশ্চিত করল ওয়ান-ইলেভেন নামের প্রচ্ছন্ন সেনাশাসন। আওয়ামী লীগ মুখে যাই বলুক তারা ইহজীবনেও বিএনপির এই লোপাট হয়ে যাওয়া কিংবা ঝাড়বংশে আপাতত নির্বংশ হওয়া ঘটাতে পারত না। এর জন্য তাদের ওই ওয়ান-ইলেভেনের কাছেই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু যেভাবেই হোক লন্ডন পালানো যুবরাজের হাত ধরে নেমে এলো তাদের দলের যবনিকা। থাকল কারা? আওয়ামী লীগ। একক দল। বছরের পর বছর দেশ শাসনের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রীয় উন্নতি আর আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে বটে সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠতায় দেশ এগোচ্ছে। কিন্তু তলে তলে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদের এক থাবায় সরকারের বুকের পাটা নুয়ে গেল। দমন অভিযান যেভাবেই হোক শান্ত করা গেলেও মতিঝিলের ঘটনার পর বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি আগের জায়গায় থাকেনি। আমি সে সময়কার আন্দোলনকারী বা আন্দোলনের নামে হঠকারীদের কোনো দোষ দেব না। তারা জানত তারা কী চায়? কেন চায়? জানি না আমরা। তাই সমঝোতার আড়ালে আস্তে আস্তে রেলের জমি থেকে টাকা সব যেমন দিতে হলো দিতে হলো আদর্শের বিসর্জন। তাদের চাওয়া মোতাবেক পাঠ্যবইগুলোও বদলে গেল। রবীন্দ্রনাথের দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে বাদ পড়ল। এমন বাদ পড়ার তালিকা দীর্ঘ। আমরা এও দেখলাম নারী নেতাদের প্রতি বিদ্বেষ আর ধিক্কার জানানোদের মঞ্চে গেলেন নারী নেতা। বড় দলের সব নারী নেতাই তাদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছেন। তাহলে যুক্তি কি এটা বলে না যে এরাই শক্তিশালী। যে সরকারের আমলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শের জয় কামনা করেছিলাম সে আমলে দেখছি সমঝোতার নামে যাবতীয় আদর্শের বারোটা বাজতে। তাই এখন আর আশা তো করিই না বরং আমি বলি যা সত্য তাই মেনে নেয়া হোক। সংখ্যালঘু নামে পরিচিত গিনিপিগ আর প্রগতিশীল নামে পরিচিত অল্প সংখ্যক মুসলমানের জীবন ও সম্পদ হোক নিরাপদ। কারণ এরাই সবার গলার কাঁটা। তাদের জীবনকে শান্তিতে রাখতে যারা দেশের মূলধারা নিয়ন্ত্রণ করে বা তলে তলে সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের কথা শোনাই উত্তম। আমি এটা কোনো কথার কথা মনে করে বলছি না। খালি গলায় বঙ্গবন্ধুকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি বললেও তাঁর কোনো লাভ বা লোকসান কোনোটা হবে না। না বললেও না। কারণ ইতিহাস আর সময় জানে তিনিই শ্রেষ্ঠতম। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের বলা বা ঘোষণার কোনো দরকার পড়ে না। তাঁকে তাঁর জায়গায় রাখার কাজ ইতিহাসই করেছে এবং করবে। বরং দেশের শান্তি আর কল্যাণের জন্য নানা রূপ ধারণের পরিবর্তে মনে ও মুখে এক থাকাটাই জরুরি। আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন, আমার মতো বহু মানুষকে আগেও দালাল বলেছেন, এবারো বলবেন তাতে কোনো লাভ হবে না। আপনাকে মনে রাখতে হবে শোক বেদনায় মুহ্যমান হওয়ার পরও জাতির জনকের জানাজায় মোট কজন মানুষ অংশ নিতে পেরেছিলেন? হত্যাকা-ে নিহত হওয়ার পরও জিয়ার জানাজায় কেমন ঢল নেমেছিল। আপনি ভুলে গেলে চলবে না এ দেশের জন্য জান দেয়া সংগ্রাম ও কৌশলে যুদ্ধ জয় করা চার নেতার একজনও সঠিক জানাজা পাননি। আর গোলাম আযমের জানাজা বা শফী হুজুরের জানাজায় মানুষের ঢল। করোনাকে ভয় না করেই মানুষ ছুটেছে। আপনি এর কী ব্যাখ্যা দেবেন? কে শুনবে আপনার তাত্ত্বিক কথা? বাস্তবতা এই এরাই এগিয়ে। হাতে সময় কম। নিজে বাঁচতে অপরকে বাঁচাতে দেশ ও সমাজ বাঁচাতে সবাই মিলে মুক্ত বুদ্ধি ও প্রগতির চর্চা না করলে বদলে যাওয়া দেশে কেউ কাউকে চিনবে না। বাঁচাতেও পারবে না। তখন কী হবে? অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App