×

মুক্তচিন্তা

পণ্য নয়, মানুষ ভাবুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১০:২৯ পিএম

পণ্য নয়, মানুষ ভাবুন
প্রতি বছর শীতকাল এলেই কম্বল বিতরণের হিড়িক পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে যায় শীতার্তদের সাহায্য করার মানবিক ছবিগুলোতে। একজনের শেয়ার করা ছবির জন্য হয়তো আরেকজনের সাহায্য করার জন্য মনোবৃত্তি তৈরি হয়। কিন্তু প্রতি বছর এনজিও কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে যে শত শত কম্বল দেয়া সেগুলোর ঠিকানা কোথায়? ত্রাণের মতো কম্বল বিতরণ সাময়িক উদ্যোগ। বন্যার সময় সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য বন্যাক্রান্ত দুস্থ, গরিব মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়। এতে তারা বিপদের সময়টায় কিছু খেয়ে বাঁচতে পারে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে সরকারের দায়িত্ব সেই অঞ্চল যেন পুনরায় বন্যাক্রান্ত না হয় সে ব্যবস্থা করা। বন্যা, খরা কিংবা জলোচ্ছ্বাসের পরবর্তী সময় এ ধরনের উদ্যোগ দেখা গেলেও অসহায়, গরিব, দুস্থ মানুষ যারা রাস্তায় পড়ে থাকে তাদের শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে এ রকম উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এক প্রকার লোক দেখানোর নাম করে প্রতিবছরই কিছু কম্বল বিতরণ করা হয়। এতে জনগণের উন্নয়নে বিরাট ফাঁকি থেকে যাচ্ছে! এই গরিব, ভবঘুরে, বাউন্ডুলে মানুষগুলোও এ দেশের নাগরিক। তাদেরও অধিকার রয়েছে মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করার। বস্ত্র, বাসস্থান দিয়ে তাদের এই মৌলিক অধিকারের চাহিদা কিছুটা লাঘব করা যায়। মানুষ মোটামুটি দুই পরিস্থিতিতে চুরি করতে পারে। এক পেটে ক্ষুধা নিয়ে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে। রাস্তায় শীতে কাতরানো মানুষগুলো পেটের ক্ষুধা অর্থাৎ শীতকালের পিঠের ক্ষুধা মেটাতেই বেশিরভাগ চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। তাদের এই চুরি, ছিনতাই শুধু আইন দিয়ে থামানো যাবে না। একবার শাস্তি দিলে তারা জেল থেকে বের হয়ে আবার একই কাজে লেগে পড়বে। অথবা জেলকেই অর্থাৎ বন্দি জীবনকেই জীবন ধারণের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবে। এতে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ভাষায়, রাস্তায় কাতরানো মানুষটি জীবসত্তার ঘরেই পড়ে থাকবে দোতলার ঘর মানবসত্তা অর্থাৎ মনুষ্যত্বের ঘরে পৌঁছাতে পারবে না। সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে হলে মানুষকে আগে পণ্য ভাবা বন্ধ করতে হবে। হরেক রকম কোম্পানি এসে গরিবের গায়ে কম্বল চাপিয়ে দিয়ে একটা ছবি তুলে চলে যাবে। আর চিৎকার করে বলবে আমরা এত এত মানুষকে সাহায্য করেছি। অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা গেলে দেখা যাবে সেই ব্যক্তিটি অথবা কোম্পানিটি হয়তো তার ট্যাক্সই ঠিক মতো দেয়নি। ফলে প্রত্যেক নাগরিকই তার অধিকার থেকে কোনো না কোনোভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। এই করোনা সময়েও এ রকম ব্যক্তিগত কিংবা কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করতে দেখা গিয়েছে গরিব, খেতে না পাওয়া মানুষদের দিয়ে। অনেক স্থানীয় নেতারা গরিবদের নিয়ে ফটোসেশন করে চাল দেয়নি। তাদের এ রকম প্রচারণা দেখে অনেকাংশেই মনে হয়েছে মানুষ যেন পণ্য! নানা কোম্পানি নানা রকমের সিল লাগিয়ে নিজেদের প্রোডাক্ট বলে দাবি করছে মানুষকে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আগাতে হবে। সাময়িক উপকারের নামে ছলনা না করে স্থায়ী পুনর্বাসনের প্রতি জোর দেয়া উচিত। শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App