×

সম্পাদকীয়

অন্যলোকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩৭ পিএম

চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সমাপ্তি একটা যুগের, একটা অধ্যায়ের। চল্লিশ দিনের লড়াই করে হেরে গেলেন। বাংলা চলচ্চিত্র হারাল ছয় দশক ধরে রুপালি পর্দায় বিরাজ করা এক মহাতারকাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ৬ অক্টোবর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্লাজমা থেরাপির পর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। গত রবিবার মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে মারা যান তিনি। প্রবাদপ্রতিম অভিনেতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সবাই। দুই বাংলার রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক, অভিনয়শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন। আমরাও শোকাহত। সেই সঙ্গে এই মহান শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করছি। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে সৌমিত্রের জন্ম। সুকুমারবৃত্তির চর্চা ছেলেবেলা থেকেই। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমার রুপালি পর্দায় নাম লেখান তিনি। এরপর তিনি সত্যজিতের ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন। ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘চারুলতা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘অশনি সংকেত’ বিশ্বব্যাপী সাফল্য অর্জন করে। ৬১ বছর দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি পেশাদার মঞ্চে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গেও সৌমিত্রের ছিল গভীর সম্পর্ক। শুধু সত্যজিৎ রায় নন, তপন সিনহা, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের ছবিতেও অভিনয় করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। রোমান্টিক হিরো থেকে ভিলেন কিংবা ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে ওঠাÑ সব চরিত্রেই সিদ্ধহস্ত। উত্তম সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। ছয় দশক দীর্ঘ তার চলচ্চিত্র জীবন। অভিনয় ছিল তার জীবনের অক্সিজেন, বলতেনÑ ‘আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি’। তবে সৌমিত্র শুধু চলচ্চিত্রাভিনেতা নন, তিনি বাংলার সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রে নিজের অবদানের ছাপ রেখে গিয়েছিলেন। নাট্যশিল্পী হিসেবে দেশজোড়া কদর। তিনি শুধু নাটকে অভিনয় করেননি, নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন। অভিনেতার কর্মজীবন শুরু আকাশবাণীর ঘোষক হিসেবে। তার আবৃত্তি দশকের পর দশক ধরে মন ভরিয়েছে আপামর বাঙালির। তিনি রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সুনীল, শক্তি এদের পাশাপাশি নবীনদের কবিতাও মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করেছেন, এমন দৃষ্টান্ত আছে। কবিতা লেখার কাজ, পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করেছেন। অবসর সময়ে ছবি আঁকতেও ভালোবাসতেন। এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে নিজেই বলেছেন, তিনি ‘কবিতা দিয়ে ভিজিয়ে দিতে চেয়েছেন’ তার অভিনয়! কবিতার বই লিখেছেন ১৪টি। একজন অভিনেতার কী অপরূপ বহুমাত্রিক তুলনাহীন পদচারণ সর্বক্ষেত্রে! বাংলার চলচ্চিত্র অভিনেতাদের মধ্যে এমন কোনো শিল্পী নেই, যার একই সঙ্গে কবিতাসমগ্র, গদ্যসমগ্র এবং নাটকসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ফ্রান্স সরকার তাকে দিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভারতে তিনি সম্মানিত হয়েছেন পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকেসহ বহু পুরস্কারে। এই গুণী মানুষ তার সৃষ্টিশীল কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App