×

বিনোদন

চোখের জলে, গান স্যালুটে বিদায় সৌমিত্রকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০৮:১৭ পিএম

চোখের জলে, গান স্যালুটে বিদায় সৌমিত্রকে

চিরনিদ্রায় সৌমিত্র।

চোখের জলে, গান স্যালুটে বিদায় সৌমিত্রকে

চিরনিদ্রায় সৌমিত্র।

চোখের জলে, গান স্যালুটে বিদায় সৌমিত্রকে
চোখের জলে, গান স্যালুটে বিদায় সৌমিত্রকে

প্রয়াত হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। ভর্তি ছিলেন বেলভিউ হাসপাতালে। সেখানেই রবিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেষ হলো এক যুগের ৷ শুধু সিনেমা নয়, সাহিত্য, রাজনীতি, কবিতা সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ৷

‌‌কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষ বিদায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। এ সময় গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানানো হয় সৌমিত্রকে।

এদিন দুপুর ১টার দিকে মমতা বেলভিউ হাসপাতালে গিয়ে সৌমিত্রের মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। মমতা বলেন, মানবিক আন্দোলনেও সর্বত্র ছুটে গিয়েছিলেন সৌমিত্র।

এর আগে সৌমিত্র কন্যা পৌলোমী জানান, প্রথমে মরদেহ দুপুর দু’টো নাগাদ নিয়ে যাওয়া হবে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে, তারপর টেকনিশিয়ন স্টুডিও। পরে সাড়ে তিনটার দিকে রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হবে মরদেহ। সেখান থেকে কেওড়াতলা শ্মশান।

১৯৩৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ জন্ম হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কয়া গ্রামে। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ঠাকুরদার সময় থেকেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। বাবার বদলির চাকরি কারণে ক্লাস ফাইভের পর হাওড়ায় চলে আসেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই স্কুলে পড়াশুনো। তারপর কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা নিয়ে পড়তেন তিনি।

প্রথম থেকেই কবিতা, আবৃতি, সাহিত্য, বাম রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিল প্রচুর। তাই সৌমিত্র মানেই যে শুধুই সিনেমার পর্দায় ডাকসাইটে অভিনেতা তা একেবারেই নয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সংস্কৃতির নানা দিকে।

[caption id="attachment_246393" align="aligncenter" width="700"] সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।[/caption]

ছিপছিপে চেহারা, উজ্জ্বল চোখ ও মন খোলা হাসি। সৌমিত্র মানেই দীর্ঘাঙ্গি সু-পুরুষ নায়ক। উত্তমের পর সে সময় মেয়েদের মনে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন সৌমিত্রই। বাঙাল-ঘটির লড়াইয়ে সব সময়ই উত্তম-সৌমিত্র কেন্দ্র বিন্দু। ফ্যানেরাও দু’ভাগ। একদিকে যখন উত্তমের নামে বক্স অফিসে দৌঁড়চ্ছে, অন্যদিকে সৌমিত্রও তাঁর স্টাইলে কামাল দেখিয়েছেন। তপন সিনহার ‘ঝিন্দের বন্দি’ ছবিতে উত্তম-সৌমিত্রের অভিনয়ের লড়াই তাক লাগিয়েছিল সবাইকে। পর্দায় যেন অভিনয়ের যুদ্ধ। তবে শুধুই ঝিন্দের বন্দি নয়, দেবদাস, স্ত্রী, যদি জানতাম ছবিতেও উত্তম-সৌমিত্রকে একই সঙ্গে অভিনয় করতে দেখেছে সিনেপ্রেমী মানুষ।

কখনও রোমান্টিক নায়ক। কখনও লড়াই করা মধ্যবিত্ত যুবকের চরিত্রে সৌমিত্র বাঙালির ঘরে জায়গা করে নিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাণিজ্যিক ছবি থেকে অন্য ধারার ছবিতেও সমান ভাবে ছাপ ফেলেছিলেন সৌমিত্র। তবে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ই তাঁকে গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় করেছিল সবচেয়ে বেশি।

[caption id="attachment_251604" align="aligncenter" width="700"] অভিনয়ের কিছু দৃশ্য।[/caption]

১৯৫৯ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র বলেছিলেন, অপুর সংসার ছবিতে প্রথমবার নাকি সৌমিত্রকে নিতেই চাননি সত্যজিৎ রায়। পরে অবশ্য সৌমিত্রকেই সবচেয়ে পছন্দ হয় তাঁর।

গল্পের বই থেকে সোজা যেন সিনেমার পর্দায় এসে দাঁড়ান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের তৈরি ফেলুদা চরিত্র যেন তাঁকে ভেবেই লিখেছিলেন। সত্যজিতের আঁকা ফেলুদার ইলাস্ট্রেশনও অবিকল যেন সৌমিত্রের মতোই। তাই তো বাঙালি সৌমিত্র ছাড়া ফেলুদা হিসেবে কাউকেই মানিয়ে নিতে পারেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App