×

সারাদেশ

হাতিয়া গণহত্যা দিবস, বিভিন্ন কর্মসূচী পালন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২০, ০৪:৪৩ পিএম

হাতিয়া গণহত্যা দিবস, বিভিন্ন কর্মসূচী পালন

আজ ১৩ নভেম্বর, বহুল আলোচিত রংপুর অঞ্চলের হাতিয়া গণহত্যা দিবস। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদরের পূর্বদিকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার দূরুত্বের হাতিয়া ইউনিয়নে ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকবাহিনী তাদের এদেশীয় দালাল, রাজাকারদের সহায়তায় কম্বিং অপারেশনের মাধ্যমে দাগারকুটি এলাকার ৭ গ্রামের নিরস্ত্র, অসহায় নিরীহ ৬ শত ৯৭ জন মানুষকে পাখির মতো গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন তাদের বর্বরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি নিষ্পাপ শিশুরাও। হানাদার বাহিনীর লাগানো আগুনের লেলিহান শিখা আর ব্যায়োনেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে একের পর এক অসহায় মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সেদিন দাগারকোটি এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পবিত্র রমজান মাসের ২৩তম দিন ছিল শনিবার। রাত শেষে ভোরের প্রাক্কালে রোজাদার মানুষ যখন সেহরি খেয়ে অনেকে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর মধ্যেই আচমকা দাগারকুটি গ্রামের চতুর্দিক থেকে শুরু হয় বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ। এর সাথে পাকবাহিনীর নিক্ষিপ্ত মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে পুরো এলাকা। মুহুমুহু গুলির শব্দে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষজন ঘরবাড়ি শিশু-সন্তান ফেলে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি তাদের। দাগারকুঠিসহ আশপাশের ৭ গ্রামের মানুষকে পাখির মতো গুলি করে একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে থাকা এদেশীয় দালাল-রাজাকাররা গ্রামগুলোতে লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠে। নিয়ে যায় ঢেউটিন সহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদ। নিরীহ মানুষজন জীবন বাঁচতে জঙ্গল- ঝোপ-ঝাড়ে জীবন আশ্রয় নিলেও তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাজাকারদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়, ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে একে একে ধরে এনে দাগারকুটি এলাকায় একত্রিত করে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এরপর তাদের ব্যায়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। অনেককে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে দেহ অঙ্গার করে দেয় বলে এলাকাবাসী জানায় । পাকবাহিনীর এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন অবুঝ শিশুরাও রক্ষা পায়নি। ১৩ ই নভেম্বর দিনভর চালানো এ কম্বিং অপারেশনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায় হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর, দাগারকুটি, হাতিয়া বকসি, রামখানা ও নয়াদাড়া গ্রামের কয়েক হাজার বাড়িঘর। মুহূর্তেই বিরান ভূমিতে পরিণত হয় দাগারকুঠি এলাকার সাতটি গ্রাম।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে দাগারকুটি গ্রামেই ৬'শ ৯৭ জন মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। এ গ্রামেই তাদের গণকবর দেওয়া হয়। সেই গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ এখন দুটোই ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এই গনহত্যার প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভ অনন্তপুর বাজারের অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে। সেই হাতিয়া গণহত্যার ভয়াবহতা আজও এই অঞ্চলের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের কামার, কুমার, জেলে-তাঁতী সহ সাধারন মানুষের আত্মত্যাগের কথা। ১৯৭১ সালের ওই মুক্তিযুদ্ধে দাগারকুটি এলাকার শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। হাতিয়া গণহত্যায় শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং শহীদদের নাম ফলক স্থাপন ও তাদের পুনর্বাসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানান এলাকাবাসী।

দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম, এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ- জান্নাত রুমি ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।

এরপর উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে সকাল ৯ টায় আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীর বিক্রম, উপজেলা নির্বাহি অফিসার নূর-এ -জান্নাত রুমি, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফয়জার রহমান প্রমুখ। দিবসটি উপলক্ষে কালো পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু। শেষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয় ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App