×

জাতীয়

হঠাৎ কেন আগুনসন্ত্রাস!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩০ এএম

হঠাৎ কেন আগুনসন্ত্রাস!

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গতকাল ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর তোপখানা রোডে দাউ দাউ করে পুড়ছে একটি বাস -ভোরের কাগজ

আরো নাশকতার শঙ্কা

সন্ত্রাসী শনাক্ত হয়েছে, দাবি পুলিশের

পাঁচ বছর পর ফের আগুনসন্ত্রাসের রাজনীতি। রাজনৈতিক সহিংসতার আগুনে পুড়ল ৯টি যাত্রীবাহী বাস। শুধু আগুনই নয়; সঙ্গে বোমাবাজিও। বোমাবাজির পর ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তাদের দাবি, জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে আরো নাশকতার শঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এদিকে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনে আবারো আগুন সংস্কৃতিতে ফিরেছে বিএনপি- এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের। অবশ্য এমন অপসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয় উল্লেখ করে অভিযোগ নাকচ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন দাবি করে অতীতের মতো আগুনসন্ত্রাস ফিরে আসার কোনো কারণ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগুনসন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলছিল বিএনপি-জামায়াতের ওই সহিংসতার তাণ্ডব। পৈশাচিক আগুনসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ওই সময়। তবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। রাজনীতিতেও অনুপস্থিত ছিল চিরচেনা সহিংসতা। কিন্তু ৫ বছর পর গতকাল ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিএনপি-জামায়াতের পূর্ব পরিকল্পিত অপরাজনীতি : উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাসে অগ্নিসংযোগের এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, হঠাৎ করে এই আগুনসন্ত্রাস বিএনপি-জামায়াতের পূর্ব পরিকল্পিত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩ দিন আগেই বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তিনি

আগে থেকেই কী করে এমন মন্তব্য করেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে তাদের অপকৌশল, ষড়যন্ত্র ছিল। মূলত জ্বালাও-পোড়াও করাই তাদের একমাত্র রাজনৈতিক কৌশল। অথচ জ্বালাও-পোড়াও করার মতো কোনো পরিস্থিতি দেশে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করছেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন করেছেন, জিডিপি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন, সর্বক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছেন এমন সময় বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। আগুনসন্ত্রাস করার অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, তাদের এই অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না। জনগণ অপরাজনীতি বরদাশত করবে না। সরকার জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর হাতে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে।

বিএনপির অস্বীকার : দুটি আসনের উপনির্বাচনের ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনা আড়াল করতেই ক্ষমতাসীনরা রাজধানীতে বিভিন্ন গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার হরণের চিত্র আড়াল করার লক্ষ্যে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। তিনি বলেন, সরকার এসব দুষ্কর্মের মাধ্যমে আগের মতোই বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও এর দায়দায়িত্ব বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাপিয়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করে হয়রানি করতে চায়।

এদিকে এমন ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখছে না দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের আশঙ্কা, এটি টেস্ট কেস। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে বর্তমানে দেশে সহিংস রাজনীতির কোনো কারণ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, অতীতের মতো আগুনসন্ত্রাস ফিরে আসার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনকে ঘিরে একটি দল যদি তাদের অতীত অভ্যাসের পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করে, তাহলে তা সফল হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন নেই। কারণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জনগণ অনেক বেশি সচেতন। সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সক্রিয়। তাই শত্রুরা দেশবিরোধী কাজে ওঁৎ পেতে থাকলেও সহিংস রাজনীতি ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App