×

মুক্তচিন্তা

নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার কমাতে সেবা ও সচেতনতা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২০, ০৮:৪৮ পিএম

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়ায় বেশি ভোগে। পরিবারের অজ্ঞতা ও চিকিৎসার অভাবে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ জানিয়েছে, নিউমোনিয়ায় বছরে ২৪ হাজার ৩০০ শিশুর মৃত্যু হয়। এদের ৫২ শতাংশই বাড়িতে এবং কোনো ধরনের চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। দেশে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর বড় কারণ নিউমোনিয়া। গত বুধবার রাজধানীর আইসিডিডিআরবি কার্যালয়ের আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। একটু সচেতন হলে এই মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। ২০১৮ সালে দেশে প্রায় ১২ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। নিউমোনিয়ার বিষয়ে এখনো গুরুত্বের অভাব রয়েছে। শিশুদের অসুস্থতার সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা (আইএমসিআই), টিকাদান কর্মসূচি ইত্যাদি ঠিকমতো ধরে রাখতে পারলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য একটি প্রাণঘাতী রোগ। এ রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা কম। শিশুমৃত্যুর হার কমানোর প্রধান অস্ত্র সচেতনতা। পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এইচআইভি-এইডসসহ অন্যান্য রোগে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক শিশুর মৃত্যু ঘটে নিউমোনিয়ায়। পুষ্টিহীনতাও শিশুর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং প্রতিটি শিশুকে জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মায়ের বুকের শালদুধ খেতে দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত অনেক রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন রোগবালাইয়ের মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে শীত বেশি থাকে বলে এ সময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। যেহেতু শীতেই নিউমোনিয়া বেশি হয়ে থাকে, তাই শীত না লাগার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য গরম জামা-কাপড় পরতে হবে। নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে, শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে যদি বাবা-মার ধারণা থাকে এবং সে অনুসারে চিকিৎসা দেয়া হয় তাহলে শিশুকে সহজেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশ শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোর সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক সাউথ সাউথ পুরস্কার পেয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের হাতের নাগালেই। তাই নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সময়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে নিউমোনিয়া রোগী গেলেই চিকিৎসা পায়। পালস অক্সিমিটার এবং অক্সিজেনের প্রাপ্যতা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত রাখতে হবে। বড় হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাংকের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমাদের সচেতনতাই নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App