×

জাতীয়

মূল্য নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ কৃষকের বাজারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৫৪ এএম

পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় তৈরি হবে পরিবহন সহায়তা দেবে সরকার মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বাজারে আগুন। চাল, আলু, তেল, আটা, পেঁয়াজ, ডিম, সবজি, গুঁড়োদুধসহ সব কিছুর দাম আকাশচুম্বি। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ জনগণের। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তবে শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত পণ্যের দামের খুব কম অংশ পান কৃষক। মাঝখানে পকেট ভারি হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের। চাল, আলুর দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে বিক্রি হচ্ছে না কোথাও। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে দেশের ৬৪ জেলায় তৈরি হচ্ছে ‘কৃষকের বাজার’। এসব বাজারে কোনো ধরনের খাজনা ছাড়াই সরাসরি কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। এমনকি কৃষকের বাড়ি থেকে বাজারে পণ্য নিয়ে আসতে পরিবহন সহায়তা দেবে সরকার। এটি করা সম্ভব হলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে এসব বাজার চালু হবে। এরপর হালকা অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পরবর্তীতে স্থায়ী রূপ পাবে এসব বাজার। জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহম্মদ ইউসুফ ভোরের কাগজকে বলেন, সবজিসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনে ও বিপণনে কঠোর হচ্ছে সরকার। উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বাজারে নিরাপদ কৃষিপণ্য বিক্রির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সিন্ডিকেট ভেঙে পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য কমাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নিত্যপণ্যের দামও কমবে কৃষকও লাভবান হবে। এজন্য রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারিভাবে কৃষকের বাজার গড়ে তোলা দরকার। তাদের দাবি, লাভের অংশ কৃষকের পকেটে গেলে উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে টার্গেট নিয়ে ১/২ শতাংশ সুদে কৃষককে ঋণ সুবিধা দিলে তারা আরো উৎসাহিত হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৃষি অর্থনীতিবিদ গোলাম হাফিজ ভোরের কাগজকে বলেন, বাজারে দুই ধরনের কৃষিপণ্য রয়েছে। একটি দেশে উৎপাদিত, অন্যটি আমদানিকৃত। দেশে উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যের খুবই কম অংশ পান কৃষক। অনেক বেশি লাভের প্রবণতা থাকায় লাগামহীনভাবে বাড়ছে কৃষিপণ্যের দাম।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, সঠিক ও সময় উপযোগী পরিকল্পনার অভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। দেশের জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী কি পরিমাণ পণ্য প্রয়োজন তা আগে থেকে নির্ধারণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে ভোক্তাদের অধিকার আদায়ে মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

এদিকে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আলু এখনো বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকায়। কমেনি কাঁচামরিচের ঝাল। প্রতি কেজি এখনো ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁঝও। দেশি পেয়াঁজের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। আকাশচুম্বি শীতকালীন সবজির দাম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। ভালো মানের মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২, মাঝারি মানেরটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা লিটারে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভপ্রকাশ করে রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা গৃহিণী বিলকিস আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, সবকিছুরই দাম বেশি। টমেটো ১২০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, আলু ৬০ টাকা এবং বেগুন কিনেছি ৮০ টাকা করে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে আমরা সাধারণ মানুষ না খেয়ে মারা যাব।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। তখন মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। দেশে এখন মানুষ প্রায় ১৭ কোটি। আবাদি জমি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার পরও খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ। ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App