×

জাতীয়

বিভক্তি মিটছে গণফোরামে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৫৭ এএম

ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগ

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগেই বিভক্তি মিটছে গণফোরামের। দলটিতে উত্তেজনা চলছে দীর্ঘদিন। একটি অংশ কামাল হোসেনের গণফোরাম থেকে বের হয়ে আলাদাভাবে কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও ড. কামালের উদ্যোগে দুই পক্ষই ঘোষিত কাউন্সিল স্থগিত করার বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সম্মিলিত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার গণফোরামের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে গণফোরামের ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গণফোরামের ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ অনুষ্ঠেয় কাউন্সিল স্থগিত করা হলো।

সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে নিজের হাতে গড়া গণফোরামকে এ ভাঙনের মুখ থেকে রক্ষা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। নিজে রাজনীতি থেকে বিদায়ের চিন্তা করলেও মৃত্যুর আগে দলের ঐক্য দেখে যেতে চান তিনি। সে কারণে দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতাদের বাসায় ডেকে কথা বলেছেন। তাদের কাউন্সিল পিছিয়ে একই সঙ্গে দুই অংশ মিলে ১৫-১৬ জানুয়ারি কাউন্সিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আলোচনায় সমঝোতার বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রগতি হয়নি। তবে আমরা সবাই সমঝোতা চাই এবং সেই চেষ্টা চলছে। হলে ভালো, না হলে আমাদের সম্মেলন ঘোষিত তারিখে হবে। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, উনি উদ্যোগ নিয়েছেন। সে জন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওনাকে বলেছি, আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই। যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আপনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সেটা শেষ করে দেন।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দ্বিধাবিভক্ত দুগ্রুপকে মিলাতে ড. কামাল হোসেন একাধিকবার গ্রুপের নেতাদের নিয়ে মুখোমুখি বসেছেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরাম আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর দুগ্রুপের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলটিতে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে ড. কামাল হোসেন এবং মন্টু গ্রুপের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।

গত ১০/১২ দিন আগে মন্টু গ্রুপের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন একাধিকবার বৈঠক করে গণফোরাম থেকে বিদায় নেয়ার বিষয়টি জানান। ড. কামালের অবসরের কথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মোস্তফা মহসিন মন্টু। তিনি বলেন, আপনি একা নন, অবসরে আমরাও যাব। সবারই তো বয়স হয়েছে। তবে এভাবে আর না, দলের ঐক্য আনার ব্যবস্থা করুন।

মন্টুর কথা শুনে ড. কামাল বলেন, ডিসেম্বরের কাউন্সিল আলাদা কেন হবে? অধিবেশনে আমিও উপস্থিত থাকব। ড. কামাল হোসেনের এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সবাই একমত হয়েছেন। তবে ড. কামাল হোসেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া এ সিদ্ধান্ত এখনো মানছেন না। ফলে ওই গ্রুপে সৃষ্টি হয়েছে তিনটি উপগ্রুপ। এর মধ্যে দুটি উপগ্রুপ মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা গণফোরামে বিভক্তি চান না, চান ঐক্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারির আগে ড. রেজা কিবরিয়া তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গণফোরামের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পরেই মূলত গণফোরামে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক পলিসি আলদা হওয়ায় চরম মতবিরোধের জের ধরে দলে বিভক্তি দেখা দিলেও দুপক্ষই ড. কামালকে দলে টানার চেষ্টা করেছেন। তবে ঐক্য ধরে রাখতেই কোনো দলে না গিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।

গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তিনি কোনো গ্রুপেই নেই। দলের মধ্যে বহিষ্কার এবং পাল্টা-বহিষ্কারের ঘটনা যা ঘটেছে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এ সময় আমরা তাকে ডিসেম্বরে কাউন্সিল করার বিষয়টি জানালে তিনি জানুয়ারির ১৫ কিংবা ১৬ তারিখ সম্মেলনের কথা বলেছেন। আমরা দ্বিধাবিভক্ত গণফোরামের ঐক্য চাই।

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। এর পরে একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ তিন নেতা। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ আটজনকে বহিষ্কার করেন রেজা কিবরিয়া। বহিষ্কার হওয়া বাকি সাতজন হলেন- অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী। আগামী ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় এই অংশের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেয়া হয়।

জানা গেছে, রেজা কিবরিয়া অংশের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পরপরই মোস্তফা মহসিন মন্টু গ্রুপ থেকে ড. কামাল হোসেনকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের কথা শুনেই ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার অবসরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ড. কামাল হোসেন তার পরিবার ও বন্ধু অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবাহানসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরিবারের সদস্যরা ড. কামালকে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App