×

সারাদেশ

প্রসূতির মৃত্যুর মামলায় ডাক্তার টিএ কামাল কারাগারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ১০:১৮ পিএম

প্রসূতির মৃত্যুর মামলায় ডাক্তার টিএ কামাল কারাগারে

ডাক্তার টিএ কামাল

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মদ্যপ ডাক্তার টিএ কামালকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডা. টিএ কামাল দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপ অবস্থায় দৌলতপুর ও পাশের ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ানসহ নানা অপারেশন করে আসছেন। তার ভুল চিকিৎসায় এর আগেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের বাচ্চু আলীর স্ত্রী রমণী খাতুন (২০) প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে গত ৮ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে আল্লারদর্গা বাজারের বিশ্বাস প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। ক্লিনিক মালিক আব্দুল লতিফ সিজার অপারেশন করে সন্তান প্রসব করাবেন বলে ওই প্রসূতিকে ভর্তি করিয়ে নেন। রাত থেকে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত প্রসূতি প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ডাক্তার এনে অপারেশন করাতে ব্যর্থ হন।

পরেরদিন (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ক্লিনিক মালিক আব্দুল লতিফের স্ত্রী কথিত নার্স নার্গিস খাতুন প্রসূতি রমণী খাতুনকে ব্যাথা নাশক ইনজেকশন দেন। পরে ডাক্তার টিএ কামাল মদ্যপ অবস্থায় এসে ঘটনার অাদ্যপান্ত না শুনেই তড়িঘড়ি করে অপারেশনের জন্য আরেকটি ইনজেকশন দিয়ে অপারেশনের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তার দ্বিতীয় ইনজেকশন পুশ করার পরপরই গর্ভের বাচ্চাসহ প্রসূতি রমণী খাতুন মৃত্যুবরণ করেন।

ক্লিনিক মালিক আব্দুল লতিফের অবহেলা ও সেখানকার ডাক্তার টিএ কামালের ভুল চিকিৎসায় ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বিক্ষুব্ধ স্বজনরা ক্লিনিকে হামলা চালান। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক মালিক আব্দুল লতিফ, তার স্ত্রী নার্গিস খাতুন ও ডাক্তার টিএ কামাল সেখান থেকে পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রসূতি গৃহবধূ রমণী খাতুনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজগর আলীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বিতর্কিত ওই ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন।

ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি রমণী খাতুনের মৃত্যুর অভিযোগে ওইদিনই তার ভাই হাসিবুল ইসলাম বাদী হয়ে ডা. টিএ কামাল, ক্লিনিক মালিক আব্দুল লতিফ ও তার স্ত্রী নার্গিস খাতুনসহ ৫ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামি ডা. টিএ কামালকে দৌলতপুর থানা পুলিশ বুধবার (১১ নভেম্বর) রাতে ভেড়ামারা থেকে গ্রেপ্তার করে দৌলতপুর থানায় নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

একাধিক নির্ভরযোগ সূত্র জানায়, ডা. টিএ কামাল দীর্ঘদিন ধরে দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিজারিয়ানসহ অন্যান্য অপারেশন করে আসছেন। তবে মদ পান ছাড়া তিনি কোনো অপারেশনেই হাত দেন না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে সবার কাছে তিনি মাতাল ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত।

সূত্রগুলো বলছে, দিনে-রাতে বেশিরভাগ সময় বেসামাল অবস্থায় থাকেন এই বিতর্কিত ডাক্তার। ফলে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার তার প্রতিদিনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। ডা. টিএ কামালের ভুল অপারেশন ও ভুল চিকিৎসায় এ পর্যন্ত অনেকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ মদ্যপ এই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার বলি হন গর্ভের বাচ্চাসহ রমণী খাতুন। এর আগে ওই একই ক্লিনিকে তার ভুল চিকিৎসায় আল্লারদর্গা হিন্দুপাড়ার রুমা রায়সহ বেশ কয়েকজন প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) শাহদাৎ হোসেন জানান, আল্লারদর্গার বিশ্বাস ক্লিনিকে রমণী নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ডা. টিএ কামালকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মাদকাসক্ত অবস্থায় তিনি বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী অপারেশন করেন বলেও অনেক অভিযোগ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App