×

সাহিত্য

‘আমার যাওয়ার জায়গা নেই, আমাকে বাঁচান!’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪৫ এএম

‘আমার যাওয়ার জায়গা নেই, আমাকে বাঁচান!’

করোনার থাবায় এখনো স্থবির রয়েছে নৃত্যপাড়া -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- ৩৮

প্রাচীন জনপদ পঞ্চগড়। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানব বসতি শুরু হয়েছে এখানে। বাংলাদেশের এই প্রান্তে পুণ্ড্র, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসকদের উদ্যোগে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য প্রত্ননিদর্শন। হেমন্ত ও শীতকালে পঞ্চগড় থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। আর তেঁতুলিয়ার চা বাগানের সুবাদে রয়েছে সবুজের সমারোহ।

অতিপ্রাচীনকালে পুণ্ড্রনগর রাজ্যে ‘পঞ্চনগরী’ নামে এক অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’ অর্থ পাঁচ, আর ‘গড়’ অর্থ বন বা জঙ্গল। বহুল প্রচলিত মত রয়েছে, ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়, এই ৫টি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের জন্যই ‘পঞ্চগড়’ নামটির উৎপত্তি। শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ সভ্যতার এই প্রাচীন জনপদও করোনার হানায় আজ স্থবির হয়ে আছে।

সূত্র জানায়, পঞ্চগড়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ২০টি। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় এক হাজারের মতো। তাদের অনেকে শিল্পী ও প্রশিক্ষক। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ বেকার হয়ে গেছেন। এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৩০ জনকে সহায়তা দেয়া হলেও অনেকেই বাদ পড়ে গেছেন তালিকা থেকে। অধিকাংশ শিল্পীর জীবন কাটছে শ্রমিকের কাজ করে, ধার-দেনা এবং জমানো টাকা ভেঙে।

জানতে চাইলে পঞ্চগড় উদীচীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, যারা মঞ্চে বা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করত, তারা এখন বেকার হয়ে গেছেন। বলা যায়, জোড়াতালি দিয়ে চলছে তাদের জীবন-জীবিকা। তিনি বলেন, যারা আত্মনিবেদনের জায়গা থেকে গান গেয়ে যাচ্ছে, যাদের বড় বড় মিডিয়ায় বা মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ নেই, তারা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই এ ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। উদীচীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার কণ্ঠেও একই সুর ধ্বনিত হলো। তিনি বলেন, আমরা আমাদের জীবনে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা করলেও এখনকার তরুণদের সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এ জগতের দিকে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। শিল্পচর্চা এখন কিছু উচ্চবিত্ত লোকজন আর নিম্নবিত্তরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানিক বাউল বলেন, আমরা বাউলরা তো চির অবহেলিত আর চির বঞ্চিত। বঞ্চনার কথা নতুন করে কি আর বলব? কষ্টের কথা প্রকাশ করতে সম্মানে লাগে।

লকডাউনে সব যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন অল্পকিছু জমানো টাকা ছিল সেসব ভেঙে চলেছি। এরপর মানুষের জমির ধান কাটা এবং রোপণ করে চলার চেষ্টা করেছি। অনন্যোপায় হয়ে বাড়ির ছাগল এবং গাছ বিক্রি করে দিয়েছি। এরপর কয়েক মাস আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ হাজার, শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আপার দেয়া তিন হাজার টাকা পেয়েছি। রইস বাউল বলেন, গানই আমার পেশা এবং নেশা। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে গান গেয়েই জীবিকা নির্বাহ করছি। দেশের পাশাপাশি নেপাল এবং ভারতেও গান গাইতে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা সব এলোমেলো করে দিয়েছে। শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, আমি গান গেয়ে সবাইকে আনন্দ দেই, কিন্তু আমার আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে সপ্তাহখানেক আগে টিএনও সাহেবের কাছে গিয়ে বলেছি, আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, আমাকে বাঁচান। তখন তিনি আমাকে দশ কেজি চাল দিলেন। তা দিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে চলছি। কিন্তু দশ কেজিতে কয়দিনই-বা যাবে! এরপর কি করে চলব জানি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App