×

সারাদেশ

অবৈধ ভাটায় পুড়বে ইট, হুমকিতে ফসলি জমি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ১০:০৩ পিএম

অবৈধ ভাটায় পুড়বে ইট, হুমকিতে ফসলি জমি

ইটভাটা। ছবি: প্রতিনিধি

অবৈধ ভাটায় পুড়বে ইট, হুমকিতে ফসলি জমি

ফসলি জমির পাশেই ইটভাটা।

পরিবেশ নষ্ট করে ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য চলছে প্রস্তুতি। উপজেলা চরফ্যাশনের প্রত্যন্ত অঞ্চল চর কলমি ইউনিয়নের প্রায় ৫ একর সরকারি জমিতে লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরির প্রস্তুতি চলছে। জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত অনেক ইট ভাটার নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও ছাড়পত্র। তবুও চলছে এসব ইট ভাটা। অদৃশ্য অনুমোদনেই অবৈধ ইটভাটা নির্মাণসহ ইট পোড়ানোর প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

চর-কলমি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অবৈধ এ ইট ভাটাটি শিফাত ব্রিক্স নামে হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও শতাধিকের বেশি বসত বাড়ির মধ্যে চালু করে ইট তৈরিতে তোরজোড় চালাচ্ছে ভাটা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া এ ভাটায় সরকারি খাস জমির সীমানা সংলগ্ন এলাকায় চলছে রাতভর ড্রেজিং। এছাড়া ফসলি জমির পাশে ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে মাটি কেটে গভীর খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানটি।

স্থানীয় বাসিন্দা বিবি কুলসুম (৪৫) বলেন, আমাদের বসতঘরের পাশে ড্রেজিং করায় আমাদের বাড়ির জমি ফাটল ধরে মাটি ভেঙে পড়ছে।

খলিফা বাড়ি এলাকার মইফুল (৮০) ও নাজমা বেগম (৬০) সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে ছেলে সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। ইট ভাটাটির জন্য এখন আর এখানে বসবাস করার মতো পরিবেশ নেই, বসতবাড়িটি ভেঙে যাচ্ছে।

ফসলি জমির কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, ভাটা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করার পায়তাঁরা করছে।

[caption id="attachment_251218" align="aligncenter" width="700"] ফসলি জমির পাশেই ইটভাটা।[/caption]

এছাড়াও ওই ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মণ কাঠ ও লাকড়িসহ গাছের গুড়ি জড়ো করা হয়েছে। গাছ কেটে লাকড়ি তৈরি করার জন্যেও রয়েছে দুটি স’মিল। ভাটাটির দুই পাশে রয়েছে হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ক্ষেত ও দুই পাশে রয়েছে ফলদ ও বনজ বাগানসহ শতাধিকের বেশি বসত বাড়ি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও বসতবাড়ির বাসিন্দারা বলেন, কাঁচা ও পাকা ধান দ্রুত কেটে নিতে হচ্ছে। ইট ভাটাটি খুবই দ্রুত চালু হবে। এমন অবস্থায় আমরা অসহায়। আমাদের কিছু করার নেই।

আবেগ ও কান্না ভড়া কন্ঠে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার কেউ নেই। আমি কোথায় যাব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী বলেন, ভাটা মালিক জয়নাল আবেদিন ও তার জামাই নুরুদ্দিন মিলে আবাসিক এলাকার ভিতরে এসে অবৈধভাবে এ ইটভাটা তৈরি করার ফলে আমরা এখন নিরূপায় হয়ে গেছি। আমরা কোথায় যাব, কার কাছে বিচার দিবো, আমাদের জানা নেই। তারা আরও বলেন, এই ভাটা কর্তৃপক্ষের প্রভাবে এলাকায় মুখ খুলতে পাড়ি না।

ভাটা কর্তৃপক্ষের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে ওই ফিল্ড এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করলেও ভাটা কর্তৃপক্ষের লোকজন তাৎক্ষনিক সেখানে উপস্থিত হওয়ায় তারা ভয় পেয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন।

শিফাত ব্রিক্স মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে ব্রিক্স ফিল্ডকে অনুমোদন দিতে চায় না। তাই কোনো ছাড়পত্র নেই। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব একটি ঝিকঝাক ইটভাটার জন্য প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ ইট পোড়াতে হয়। ৮-১০ লাখ ইট অন্য ভাটা থেকে ক্রয় করে পরিবেশবান্ধব ইট ভাটা তৈরি করতে পাড়েন বলে প্রশ্ন করলে তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

ওই ভাটাটি পরিদর্শন করে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App