×

পুরনো খবর

শিশুর বিকাশে নৈতিক শিক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪৪ পিএম

শিশুর বিকাশে নৈতিক শিক্ষা
মুখে মুখে সবাই বলি, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তাদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলেই তৈরি হবে সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ। এতে অনৈতিক সব কাজকর্ম কমে আসবে। কিন্তু উচ্চারিত এ বাক্য আমরা নিজেরাই বিশ্বাস করছি না বা করতে পারছি না। মূলত শিশু শিক্ষার লক্ষ্য হলো ‘শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন করা এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। শিশু শিক্ষার প্রারম্ভে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত সবাই একযোগে শিশুকে বাংলা, ইংরেজি বর্ণমালা শেখানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকি। এক্ষেত্রে শিশুর মানসিক সামর্থ্যকে বিবেচনায় না আনায় তার আগ্রহকে গুরুত্বহীন করে তোলা হচ্ছে। এর ফলে শিশুর পাঠগ্রহণ আজ তার কাছে নিরানন্দ হয়ে উঠেছে। নামি-দামি বিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির প্রয়াসে শিশুকে তার শৈশবের স্বর্গীয় আনন্দ বিসর্জন দিয়ে শিখতে হয় বড়দের জ্ঞান, বয়স, রুচি ও সামর্থ্যরে শিক্ষা, যা তার জন্য অতিরিক্ত বোঝাস্বরূপ। শিশুরা তোতা পাখির মতো অনেক বড় বড় কঠিন শব্দ মুখস্থ বলতে পারে। অথচ শিশু বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো জ্ঞান বা ধারণা রাখে না। শিশুদের জ্ঞানহীন ‘জ্ঞানার্জন’ অভিভাবকদের পুলকিত করে থাকে। এ পড়ালেখা শিশুকে কতটা বিকশিত করছে, সমাজকে কতটুকু উপকৃত করছে, দেশকে কী দিচ্ছে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এখন এসেছে। অন্যদিকে মনোবিজ্ঞানবহির্ভূত শিক্ষা শিশুদের জোর করে শেখানোর পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, এ বয়সে যদি লেখাপড়ার ওপর চাপ না দেয়া হয়, তবে বড় হয়ে পড়ার অভ্যাস গড়তে সমস্যা হবে। তবে মাতৃদুগ্ধ পানের মেয়াদ যেমন নির্দিষ্ট, তেমনি নির্ধারিত রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়, প্রথম শ্রেণির ভর্তির বয়স, এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার বয়স, চাকরির বয়স। কিন্তু শিশু শিক্ষার জন্য বয়সের বিষয়টিকে গুরুত্বহীনভাবে দেখা হচ্ছে। প্রথম শ্রেণি থেকে পরীক্ষা দিতে দিতে শিশুর পরীক্ষা দেয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে কিংবা পরীক্ষাভীতি কমে যাবে, এটা খোড়া যুক্তি। পরীক্ষার যন্ত্রণায় হারিয়ে যেতে বসেছে শিশুর আনন্দময় শৈশব। শিশুর খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, গল্প, কবিতা, ছড়ার বই পড়া, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন, নৈতিক শিক্ষাসহ ব্যবহারিক শিক্ষা সব আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পড়া, স্কুল, কোচিং এসবই যেন শিশুর জীবন। পরীক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত, নিরক্ষর সবার মাঝে ঐক্যবদ্ধ সুর। শিশুকে ভালোভাবে পাস করাতেই হবে। অভিভাবকদের মধ্যেও রীতিমতো চলে প্রতিযোগিতা। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে তারা উদাসীন। শৈশবে শিশুরা পরিচিত হতে থাকে চারপাশের দ্বৈতসত্তার মানুষের সঙ্গে। তাদের বুঝতে কষ্ট হয় কোনটি সত্য কোনটি মেকি। শিক্ষাজীবন শুরুর পূর্বরূপ পরবর্তী রূপ, কোনটি ছলনা এর উত্তর কি কারো জানা আছে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, শিক্ষার নামে শিশুরা জীবন-মন-প্রাণ উজাড় করে দিচ্ছে; কিন্তু তাদের কী দিচ্ছে সেই তথাকথিত শিক্ষা? এ শিক্ষাপ্রাপ্ত শিশুরা কি নৈতিকতা-অনৈতিকতার মধ্যে কোনো সীমারেখা টানতে পারছে? বাবা-মাসহ বড়দের প্রতি যথাযথ সম্মান, ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারছে? সমাজের সদস্যদের সুখ-দুঃখ কি তাদের স্পর্শ করছে? সম্ভবত উত্তর কী হবে সবারই জানা। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা বড়দের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথাটাও বলতে পারছে না। আমাদের প্রতিনিয়ত জীবনচারিতায় ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছে বিষয়গুলো, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয়। শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App