×

মুক্তচিন্তা

পরিত্যক্ত মহাপ্রভুর দাদির বাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪১ পিএম

পরিত্যক্ত মহাপ্রভুর দাদির বাড়ি
সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ কলিযুগের পাবনাবতার ভগবান শ্রী শ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটা মহাপ্রভুর দাদির (ঠাকুরমা) বাড়ি। মহাপ্রভুর পিতা শ্রী জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ির একাংশ সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছুটা সংস্কার করে একটা মন্দির তৈরি করা হলেও পরিতাপের বিষয় অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় বর্তমান অবধি পড়ে আছে মহাপ্রভুর ঠাকুরমার বাড়িটি। সম্মানিত পাঠক ও দর্শনার্থীরা আপনারা সরজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করলে দেখতে পারবেন কতটা অবহেলা আর অযতেœ পড়ে আছে এই তীর্থ স্থানটি। যথাযথ সংস্কারের অভাবে জগন্নাথ মিশ্রের তখনকার আমলে গড়ে ওঠা মন্দিরগুলো আজ অস্তিত্বহীন। বাড়িটি এখন বন্য জীবজন্তুর অভয়ারণ্য। সাপ বন্যপ্রাণী পোকামাকড়ের উৎপাতের জন্য দিনের বেলায়ও বাড়িটি দর্শনার্থী দর্শন করতে যেতে ভয় পান। চারদিকে লতাপাতায় ঘেরা বাড়ির ভেতরে স্থাপিত মন্দিরগুলো দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় কতটা যতœ আর্দির অভাববোধ করছে স্থাপনাগুলো। মন্দিরগুলোর দেয়াল ভেঙে পড়ে আছে। কোনো কোনোটার খসে পড়েছে দেয়ালের ইট। বলাবাহুল্য, এটি শুধু তীর্থ স্থানই নয় বরং প্রত্নতত্ত্বের একটি নিদর্শনস্বরূপ স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। যা সংস্কারের অভাবে নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু কোনো একটা সময় এই বাড়িতে মহাপ্রভু স্বয়ং এসেছিলেন তার ঠাকুরমাকে দেখতে। কথিত আছে জগন্নাথ মিশ্র শ্রীহট্ট ছেড়ে ভারতের নবদ্বীপে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে মহাপ্রভুর ঠাকুরমা জগন্নাথ মিশ্রের কাছে আবদার রেখেছিলেন তার নাতি যেন একটিবারের জন্য হলেও তাকে দেখতে আসে শ্রীহট্টের এই ঢাকা দক্ষিণ ধামে। জগন্নাথ মিশ্র যখন শ্রীহট্ট ছেড়ে নবদ্বীপে চলে যান তখন কিন্তু মহাপ্রভুর জন্ম হয়নি। জগন্নাথ মিশ্র নদীয়ায় চলে যাওয়ার পর ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি নদীয়ানগরের শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হন। যা হোক পরবর্তী সময়ে মহাপ্রভু তার ঠাকুরমার আবদার পূরণ করতে এই শ্রীহট্ট ধামে অর্থাৎ তার পৈতৃকভ‚মিতে এসেছিলেন এবং দুদিন অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু এমন একটি দর্শনীয় তীর্থ স্থান সংস্কারের অভাবে আজ তার ঐতিহ্য হারানোর সংকটে। সংস্কারের কাজ দূরে থাক উপরন্তু চলছে কিছু কুচক্রীমহল ও ভূমিখেকোদের ভোগ দখলের পাঁয়তারা। বিচক্ষণতা আর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তীর্থ স্থানটির অনেক জায়গা বর্তমানেও অনেকের অবৈধ ভোগ দখলের শিকার। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে মহাপ্রভুর বাড়ির আরো অনেক জায়গা পাওয়া যাবে যেগুলো ভ‚মিখেকোরা দখল করে ভোগ করছে বহুকাল যাবৎ। তাই বর্তমানে ধামের দৃশ্যমান যতটুকু জায়গা আছে তা কুচক্রীমহলের কুদৃষ্টি থেকে ধামকে রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক ওই ধামের সংস্কার কাজ করা অতীব জরুরি। সংস্কার করে মন্দিরের সেবা পূজার ভার শক্তিশালী বিচক্ষণ কাউকে দেয়া যেতে পারে। সেটা আমরা সব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের দাবি। কারণ ধামের অনেক সম্পত্তি ছিল এখনো যা আছে তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সুষ্ঠু, সৎ, বিচক্ষণ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে ধামের কোনো চিহ্ন থাকবে কিনা তা আমাদের সন্দেহাতীত। তাই সরকার তথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আর্জি ওই ধামের ঐতিহ্য রক্ষায় ধামের সংস্কার করে যথাযথ মানসম্মত কোনো কমিটি গঠন করে কিংবা সনাতন ধর্মীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ওপর ধামের দায়িত্বভার প্রদান করা হোক। কারণ এই ধাম শুধু সিলেটবাসী নয় সব বিশ্ববাসীর সম্পদ এবং গৌরবের মহাস্থল। জয় মহাপ্রভু। সিলেট। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App