×

জাতীয়

অনিশ্চয়তায় এন্টিজেন টেস্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১৩ এএম

মহামারি নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত করবে ধীরগতি।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ গিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আরটিপিসিআরের পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বরাবরই জোর দেয়া হচ্ছিল র‌্যাপিড টেস্টের ওপর।

তারা বলছেন, অতি স্বল্প সময়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সারাদেশে এন্টিজেন টেস্টের চাহিদা রয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেয়। এর আগে গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এন্টিবডি ও এন্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ২৪ জুলাই এন্টিজেন টেস্টকে অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সে অনুযায়ী এই টেস্টের জন্য কিট কেনার স্পেসিফিকেশন দেয়ার কথা।

মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এন্টিজেন অনুমোদন সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সারাদেশে এন্টিজেন টেস্টের চাহিদা রয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রস্তাবনা এবং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ সেপ্টেম্বরের ‘ইনটারিম গাইডেন্স’ অনুসরণ করে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এন্টিজেন টেস্ট চালুর অনুমতি দেয়া হলো।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে খুব দ্রুতই এই এন্টিজেন টেস্ট শুরু হবে। কিন্তু ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এর বাস্তবায়ন নেই। কবে শুরু হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। আসন্ন শীতে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি মহামারি নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন তারা।

কবে নাগাদ এন্টিজেন টেস্ট চালু হতে পারেÑ এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই জটিলতা কাটিয়ে এন্টিজেন টেস্ট শুরু করতে পারব।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কিট নিয়ে জটিলতায় শুরু করা যাচ্ছে না এই টেস্ট। জানা যায়, প্রায় ১০ লাখ কিট সরবরাহের জন্য ইউএনএফপিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা এ কাজের জন্য ১০ দিন সময় নিয়েছিল। কিন্তু এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও তারা কিট সরবরাহ করতে পারেনি। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে (সিএমএসডি) ২ লাখ কিটের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের কিট মানসম্মত হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ওই প্রক্রিয়ায়ও কিট কেনা হয়নি। এসব কারণে এন্টিজেন টেস্ট শুরু করতে সময় লাগছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন কিট না আসায় এন্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে সময় লাগছে। তবে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু সময় লাগছে। কিট এসে পড়লেই পরীক্ষা শুরু করা হবে।

জানা যায়, বিশ্বের হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এন্টিজেন টেস্টের মানসম্মত কিট প্রস্তুত করে। আর বিশ্বব্যাপী এই পরীক্ষার চাহিদা থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো কিট প্রস্তুত করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। ধনী দেশগুলো এসব কিট কেনার জন্য আগাম বুকিং দিয়ে রাখছে। যেমন কোরিয়ান কোম্পানির কিট আগাম বুকিং দিয়ে কিনেছে ভারত।

এদিকে সম্প্রতি মার্কিন ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, ‘ফলস’ পজেটিভ রিপোর্ট দেখাতে পারে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বেশির ভাগ হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে সময় বাঁচিয়ে বহু মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টেই ভরসা রাখছেন চিকিৎসকরা। তাই অনেক বেশি সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ক্লিনিক্যাল সেন্টারগুলোকে। টেস্ট কিটে কোনো গলদ থাকলে ভুল রিপোর্ট দেয়ার আশঙ্কাই বেশি। সেক্ষেত্রে রোগী কোভিড পজেটিভ না হলেও টেস্টের রেজাল্টে পজেটিভ রিপোর্ট আসবে।

দেশে র‌্যাপিড টেস্টের পক্ষে মত দেন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা যদি আক্রান্তদের শনাক্ত করতে পারি তাহলে পরবর্তীতে পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে তারা করোনা আক্রান্ত কিনা সেটি নিশ্চিত করা যাবে। র‌্যাপিড টেস্টে ‘ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্ট আসতে পারে এই কথাটি অনেকেই বলে থাকেন। আমি বলতে চাই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রচলিত দুধরনের টেস্টই শতভাগ সফল বা ব্যর্থ নয়। কিছু সুবিধা এবং অসুবিধাও এই দুধরনের টেস্টের ক্ষেত্রেই রয়েছে। পিসিআর টেস্টের ক্ষেত্রেও এই একই রেজাল্ট আসতে পারে। আমাদের উচিত এখন বেশি বেশি রোগী শনাক্ত করা। আর র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমেই তা সম্ভব।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, এন্টিজেন টেস্টের জন্য কিটের কার্যকারিতা ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করতে হয়। পিসিআর পরীক্ষাতে আসা ফলাফলের সঙ্গে এন্টিজেন পরীক্ষার ফলাফল কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তা দেখতেই কার্যকারিতা যাচাই করতে হয়। কারণ এন্টিজেন টেস্টের নীতিমালা অনুযায়ী যদি ফলাফল না আসে তাহলে সেই এন্টিজেন কিট অনুমোদনযোগ্য হবে না।

কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, মহামারির চিত্র, মহামারি সংক্রান্ত গবেষণা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বিস্তারে এন্টিজেন-এন্টিবডি টেস্ট যে অপরিহার্য তা সব দেশেই প্রমাণিত। কিন্তু আমরা এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করব কি করব না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি। আবার সিদ্ধান্ত নিয়ার পরও তা কার্যকর করতে গড়িমসি করছি। শুধু এন্টিজেন টেস্ট করার বিষয়টি বড় কথা নয়। পরীক্ষা আরো সহজলভ্য করা দরকার। যেসব জেলায় আরটিপিসিআর ল্যাব নেই, সেসব জেলায় আগে এন্টিজেন টেস্ট শুরু করা দরকার। সরকারও এমনটাই জানিয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট নিয়ে জটিলতা এবং জল ঘোলা করে কাজটি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App