×

সাহিত্য

দিনমজুরিতে দিন গুজরান করছেন মুন্সীগঞ্জের শিল্পীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২০, ১২:২৬ পিএম

দিনমজুরিতে দিন গুজরান করছেন মুন্সীগঞ্জের শিল্পীরা

করোনায় এখনো থমকে আছে এমন ভরত নাট্যম নৃত্যের মঞ্চায়ন --ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- ৩৬

ইতিহাস-ঐতিহ্য আর বহু কীর্তিমান মনীষীর স্মৃতিধন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা। সুপ্রাচীন চন্দ্ররাজাদের তাম্রশাসনের অঞ্জলি থেকে শুরু করে পাল, সেন, মোগল, বারো ভুঁঁইয়াদের কীর্তিতে সমুজ্জ্বল বিক্রমপুরের কীর্তিময় অংশ। মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন নাম ছিল ইদ্রাকপুর। মুন্সীগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান মিলেছে। বৌদ্ধ বিহারে ৫টি ভিক্ষু কক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। ধারণা, জ্ঞানতাপস অতীশ দ্বীপঙ্করের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ইদ্রাকপুর কেল্লা, বাবা আদম মসজিদ, আউটশাহি মঠ, মাইজপাড়া মঠ, শ্যামসিদ্ধি মঠ, সোনারঙ জোড়া মঠ, হরিখালি মা লক্ষ্মী মন্দির, মেঘনা সেতু, মীরকাদিম সেতু, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়ি, হরিষচন্দ্র দীঘি। কিন্তু প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমুজ্জ্বল কীর্তিময় মুন্সীগঞ্জে করোনা ঢুকে এর সাজানো ছবিটা ম্লান করে দিয়েছে।

মুন্সীগঞ্জে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৫০টি, সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা ১ হাজারের মতো। তারা সম্পূর্ণ বেকার হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে চাল, ডাল তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। বাকি অনেকের জীবন কাটছে দুঃসহ কষ্টে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেউ কেউ দিন মজুরের কাজ এবং শাকসবজিও বিক্রি করছেন। করোনাকালে শিল্পীদের প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন এখানকার সংস্কৃতি কর্মীরা।

নাট্যকার, নির্দেশক ও বিটিভির সংগীত পরিচালক শিশির রহমান বলেন, করোনায় যন্ত্র শিল্পী থেকে শুরু করে সংগীত ও তবলা শিল্পীরা একেবারেই বেকার হয়ে গেছে। কেউ কেউ নির্মাণকাজে দিন মজুরি করছেন। কেউ কেউ শাকসবজি বিক্রি করছেন। মুন্সীগঞ্জ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন বলেন, যারা নানা অনুষ্ঠান করে সংসার চালাতেন তাদের করুণ অবস্থা। সংসার টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার গার্মেন্টস থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই ভর্তুকি দিচ্ছে, শিল্পীর শিল্পসত্তা বাঁচিয়ে রাখতে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে উদীচীর এই নেতা আরো বলেন, পেট ফুটো থাকলে বা যদি ভাতের অভাব থাকে শিল্পীর মুখে গান থাকবে না।

সা রে গা মা পা সংগীত বিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, যারা গান গেয়ে, নাচ করে সংসার চালায় তারা চরম সংকটে আছেন। এখনো পর্যন্ত কোনো আয়ের পথ খোলেনি। তাহলে কোথায় দাঁড়াবে তারা? শিল্পীরা খেয়ালি স্বভাবের। তারা মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারে না। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, যে দেশে গুণের কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম মওলা তপন বলেন, মুন্সীগঞ্জে ভালো কোনো মিলনায়তন নেই। আমরা ‘গণ সদন হল’ পুনঃসংস্কারের আন্দোলন করে আসছি। অথচ এটা কেউ কানেই নিচ্ছে না। এখন করোনার থাবায় অমানবিক জীবনযাপন করছে শিল্পীরা। নৃত্যশিল্পী পরিষদের সভাপতি নুরুন্নবী মুন্না বলেন, টিউশনি বন্ধ, স্কুল বন্ধ। অনুষ্ঠান বন্ধ। আমাদের বাঁচার পথটাই বন্ধ! আমরা ভালো নেই!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App