×

মুক্তচিন্তা

শহীদ নূর হোসেন একটি চেতনার নাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১১:২০ পিএম

শহীদ নূর হোসেন একটি চেতনার নাম

নুর হোসেন

নূর হোসেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নায়ক। নায়ক তো বটেই বাঙালির ইতিহাসে নূর হোসেন প্রেরণাদায়ক দুর্লভ সাহসী এক যুবকের নাম। যিনি স্বৈরাচার সরকার পতনের মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে নেমে এসেছিলেন রাজপথে। বেছে নিয়েছিলেন প্রতিবাদের অভিনব কৌশল। নিজের শরীরকে বানিয়েছেন ক্যানভাস। তুলির ছোঁয়ায় এঁকেছেন মাত্র ছয়টি শব্দের অমর স্লোগান ‘স্বৈরাচার নীপাত (নিপাত) যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। প্রতিবাদের তীর গাঁথা অনন্য এ স্লোগানই হয়ে উঠেছিল স্বৈরাচার সরকার পতনের মূলমন্ত্র। যথেষ্ট মেধা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের অভিশাপে বেশিদূর পড়াশোনা করতে না পারা নূর পরিবারের পাশাপাশি দেশকে ভালোবেসেছিল হৃদয় দিয়ে। বলা যায় নূর হোসেনের হৃদয়ে দেশপ্রেমের বীজ বপিত হয় তার জন্মদাতা মজিবুর রহমানের কাছ থেকেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে কাঞ্চন হাওলাদার নাম পরিবর্তন করে মজিবুর রহমান হওয়া পিতার সান্নিধ্যে থাকা পুত্র নূর সবসময় শুনতেন দেশের গল্প। দেশের প্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভালোবাসা ও ত্যাগের গল্প। পিতার বয়ান শুনে শুনেই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তার মায়া জন্মে। আশির দশকে দেশে যখন অরাজক পরিস্থিতি তখন তিনি বুঝতেন স্বাধীনতার পরও দেশে স্বাধীনতা কথাটি আর বেঁচে নেই। গণতন্ত্র, ব্যক্তি স্বাধীনতা এসব আভিধানিক কথা অধিকাংশ মানুষের মতো হয়তো তিনিও বেশি একটা বুঝতেন না। তবে আঁচ করতে পারতেন মানুষের মনে শান্তি নেই। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঐতিহাসিক ঢাকা অবরোধ আন্দোলনে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন বুক টান করে রাজপথে নেমেছিলেন জীবন্ত পোস্টার সাজে। পায়ে কেডস জুতা, পরনে জিন্স প্যান্ট, কোমরে বাঁধা লালা রঙের শার্ট, খোলা গতর, বুকে-পিঠে লেখা অমর বাণী। সত্যিই জনতার মাঝে সেদিন এক অন্যরকম চরিত্র ছিলেন তিনি। যা সবার চোখে লক্ষণীয়। মিছিলের অগ্রভাগে দেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে কাছে ডেকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন গায়ে জামা দিতে। জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক নূর ভীত না হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে মিশে যান জনসমুদ্রে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের মধ্যেও নূর হোসেনকে আলাদা করা যায় তার খোলা গতরে অনন্য সেøাগান দেখে। যা জ্বালা ধরিয়ে দেয় এরশাদের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর চোখে। মিছিলটি যখন গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসে ঠিক তখনই শুরু হয় মিছিলের ওপর পুলিশের অতর্কিত গুলিবর্ষণ। যার একটি গুলি এসে ফুটো করে দেয় নূর হোসেনের বুক। তার রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। নূর হোসেন পরিণত হন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মূর্ত প্রতীকে। যদিও এরশাদ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজেছিল ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। তবে নূর হোসেনের মহান আত্মত্যাগ সে আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। তার ধারাবাহিকতায় এই আন্দোলন একটি দাবিতে পরিণত হয়েছিল ‘এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি’। গণতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর নূর হোসেনের আত্মত্যাগ পরবর্তী প্রজন্মকে স্পর্শ করে দারুণভাবে। তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এখনো বিভিন্ন আন্দোলনে তরুণরা খোলা গতরে বিভিন্ন আন্দোলনে নেমে আসে রাজপথে। নূর হোসেন এমনি করে বেঁচে থাকবেন গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে পরম শ্রদ্ধায়। জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় ‘নূর হোসেন তোমার প্রতি সমগ্র জাতির আজ অঙ্গীকার। তুমি প্রতিবাদের প্রতীক। তুমি আজ প্রতিবাদের পোস্টার হয়ে রয়েছো প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালির হৃদয়ে। তোমাকে হাজার সালাম।’ নূর হোসেন একদিন তার দুঃখিনী মাকে বলেছিলেন, দেখো একদিন আমি এমন কিছু করব যেন আমাকে সবাই মনে রাখে। নূর জীবন দিয়ে কথার সত্যতা প্রমাণ করে গেলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথার সঙ্গে মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে ‘নূর হোসেন মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। লেখক ও গবেষক [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App