×

আন্তর্জাতিক

বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় করায়ত্ত করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসীন হতে যাওয়া বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে কেমন হবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক? এই প্রশ্নের জবাব পেতে উদগ্রীব অনেক কৌত‚হলী বাংলাদেশি। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, বারাক ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকেই বাইডেনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক ভালো ছিল এবং বাইডেন বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক আরো উষ্ণ হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইডেনের মেয়াদে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে এবং শেখ হাসিনার সরকার বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এতে ওয়াশিংটন-ঢাকা সম্পর্কে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। তবে তিনি কীভাবে তার নির্বাচনী প্রচারের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন তা পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ঢাকা মনে করে, নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উষ্ণ হবে এবং বাংলাদেশ যে ইস্যু নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কাজ করতে চায়- তার মধ্যে একটি ইস্যু জো বাইডেনের নিজস্ব ইস্যু। এই হিসেবে বাংলাদেশ মনে করছে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে ‘বেগ’ পেতে হবে না। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর, অভিবাসন ইস্যুতে আরো নমনীয় হওয়ার মতো সুযোগ বাইডেন প্রশাসন থেকে পাওয়া যাবে। চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে, ওয়াশিংটনকে কৌশলগতভাবে পাশে রাখাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক উষ্ণ হবে। বেশ কয়েকটি ইস্যুতে বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ুবিষয়ক ইস্যু একটি। বাংলাদেশ চায় জলবায়ু ইস্যুতে কাজ

করতে। বাইডেনও নির্বাচনী প্রচারে জলবায়ুবিষয়ক ইস্যুতে জোর দেয়ার কথা বলেছেন। এর ফলে জলবায়ু নিয়ে বাংলাদেশ ও বাইডেনের ইস্যু এক। কাজেই এক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ভালো কাজ করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের কাছে আরো বেশি কিছু আশা করে বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা করেছে। মিয়ানমারের চার জেনারেলের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনও এক্ষেত্রে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে ঢাকা।

একই সঙ্গে অভিবাসীসহ নানা ইস্যু নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় থাকবে বলে বিশ্বাস করেন মোমেন। ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মাঝেমাঝে যুক্তরাষ্ট্র যেসব কথা বলে বাইডেন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশ তা আশা করে না। এছাড়া বারাকা ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক ভালো ছিল বলে জানান মোমেন। এ অবস্থায় বাইডেন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সরাসরি টেলিফোন করে স্বাগত জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গেও বাইডেনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সবমিলিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের কাজ করতে সমস্যা হবে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জো বাইডেনকে যে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন, নতুন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায়, সমৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরো শক্তিশালী করবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার ও অটুট বন্ধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি আপনার দেশের শীর্ষ পদে থাকার সময়ে এই সম্পর্ক নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আমি মনে করি। এছাড়া অভিন্ন স্বার্থের পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড, রোহিঙ্গাদের মতো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে এবং নিরাপদ ও উন্নত বিশ্ব গড়তে আপনার সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, বিএনপি আশা করে জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবেন এবং একই সঙ্গে বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরালো অবদান রাখবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোয়াইট হাউসে আগামী জানুয়ারিতে জো বাইডেন দায়িত্ব নেবেন। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন একসময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ওই সময় থেকে জো বাইডেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে ওঠে। সেই উষ্ণতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে ঘনিষ্ঠ মহলে আলাপ করেছেন মোমেন। তিনি এও নিশ্চিত করেছেন, আমেরিকা-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো বজায় থাকবে।

ঢাকা জানে, বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন এমন একসময় যখন মহামারিতে আচ্ছন্ন গোটা পৃথিবী। তবে এটাও ঠিক, তিনি ওবামার আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলেন। তার অর্ধেকেরও বেশি জীবন ওয়াশিংটনে কাটিয়েছেন এবং ক্যাপিটল হিলের বিচরণ জানেন। এ জন্য ঢাকা বিশ্বাস করে বাইডেন প্রশাসন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে। বাইডেন অন্তত বিশ্বে উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করবেন না। এতে বিশ্বে কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে। বাংলাদেশের প্রতি দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃত এশিয়া-প্যাসিফিক নীতিমালার মধ্যে রূপ পাবে এবং এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অগ্রাধিকার পেলে ও সামরিকীকরণের প্রচেষ্টা কমিয়ে দিলে এটি বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য ভালো হবে, বলছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, এটি আশা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য বাইডেন প্রশাসনে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক নীতির পাশাপাশি এর সামগ্রিক বৈদেশিক নীতির ধরনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবির বলেন, যদিও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) মাধ্যমে সামরিকীকরণের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চলছে, তবে বাইডেন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক দিকগুলোতে বেশি জোর দেবেন বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া বাইডেন প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা সুবিধা পেতে পারে। এ বিশ্লেষক বলেন, বাইডেন অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করতে এবং অভিবাসী পরিবারগুলোর জন্য সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন।

বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মার্কিন সম্পর্ক ব্যক্তি বা দলের ওপর নির্ভর করে না। বরং এ ধরনের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যায়। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক অক্ষত রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সরকার কাজ করবে এবং স্থগিত থাকা সুযোগ-সুবিধাগুলো পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App