×

মুক্তচিন্তা

শীতে করোনা প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:৫০ পিএম

শীতের আগমন বোঝা যাচ্ছে। তাপমাত্রাও আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলে। ঢাকার তাপমাত্রার ক্ষেত্রেও ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে শীতের আমেজ অবশ্যই খুব বেশি সুখকর নয়। রেল স্ট্রেশন, ফুটপাত বা উন্মুক্ত জায়গায় এখনো অনেক মানুষ রাত্রিযাপন করে বা করতে বাধ্য হয়। শিশুরাও অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি ওম পায় না। এবার বন্যার প্রকোপও ছিল অনেক বেশি। করোনার জন্য অর্থনৈতিক চাপের আগ্রাসন এখনো আমাদের পুরোপুরি ন্যুব্জ করে রেখেছে। প্রতিদিন করোনা রোগী বাড়ছে। হাতছানি আছে অনেক অনিশ্চয়তার। একদিকে অর্থনীতিকে বাঁচানো অন্যদিকে করোনা প্রতিহত করার চ্যালেঞ্জ! সব চ্যালেঞ্জ একীভ‚ত করে এগিয়ে যাওয়া সত্যিই খুব বেশি কঠিন কাজ। তবে সামনের দিনের ভাবনায় কিছু পরিকল্পনা এবং আগে থেকেই করোনাকে প্রতিহতের ব্যবস্থা রাখতে পারলে হয়তো আমরা এই সমস্যাগুলো উতরে যেতে পারব। আমাদের দেশে শীতের প্রকোপ বাড়লে করোনা বাড়বে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে বলেছেন সবাইকে সাবধান হতে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে আমাদের পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী আগানোর হিসাব করলে দেখা যাবে বরাবরের মতোই আমরা নিয়ম মানার ক্ষেত্রে আগের মতোই অনীহাসমৃদ্ধ! বেশিরভাগ মানুষ ইচ্ছা করেই মাস্ক পরছে না, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও খুব বেশি অমনোযোগী, গণপরিবহনে কোনো নিয়ম নেই, অফিসগুলোতেও ঢিলেঢালা ভাব! এই অবস্থায় যখন শীত আসছে আমাদের আসলে প্রস্তুতি কতটুকু? শীত যখন পুরোপুরি শুরু হবে তখন আমাদের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবিলার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়তে পারে তাহলো স্বাস্থ্যসেবা এবং মানুষকে সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা। গত দুদিন করোনা রোগী এবং মৃত্যু দুই-ই বেড়েছে। বহির্বিশ্বের গড় দেখলে দেখা যায় করোনার প্রকোপ বেশি হয়েছে শীতকালেই। এখন এই ছিন্নমূল মানুষ, ফুটপাতে থাকা শিশু এদের আমরা কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারব? একদিকে শীতের প্রচণ্ডতা অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা! সব মিলিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ এখন যেন সময়ের দাবি হয়ে গেছে। সরকার এ পর্যন্ত করোনার সময়ে যে কাজগুলো করে অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু শীতকালে হঠাৎ অবস্থা খারাপের দিকে গেলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও শীতবস্ত্রের খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে এবং এগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানোও সমস্যা দেখা দেবে। শীত এখন অল্প কিছু পরিমাণে পড়ছে। তাতেই মানুষের জবুথবু অবস্থা। তাই এবার পুরো শীত আসার আগেই সবার কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছাতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে যাতে সবাই শীতবস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এ জন্য দুটি করে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া প্রয়োজন। সরকারের একার পক্ষে কাজে সমস্যা দেখা দিলে এসব ক্ষেত্রে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। প্রতিটি থানা, ইউনিয়নে করোনার সময় যারা বা যে কমিটি কাজ করেছে তাদের কাছ থেকেও সহায়তা নেয়া যেতে পারে। স্থানীয় যেসব সংগঠন আগে থেকে এগুলো নিয়ে কাজ করছে তাদেরও এ কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। পোশাক শিল্পের দিকেও আলাদা দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। পোশাক শিল্পে একসঙ্গে অনেক মানুষ কাজ করেন। খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে পোশাক শিল্পের মানুষগুলোই বেশি নিরাপদ ছিল করোনার সময়। যার বড় কারণ হলো নিয়ম মানার প্রবণতা। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ম মানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত যোগ করে পোশাক শিল্প মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। বাজারে নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ছড়াছড়ি। এগুলো অন্যদিক দিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। করোনা প্রতিরোধী হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও রোগীর ব্যবহৃত বস্তু সরাসরি নদীর সঙ্গে মিশে পানি দূষণ ঘটাচ্ছে এবং একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে পানির মধ্যে করোনা জীবাণু প্রকট। সুতরাং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ভাবনায় আনতে হবে। আসুন সচেতনতা দিয়ে করোনাকে রুখতে আমাদের প্রয়াসকে আরো দৃঢ় করি। সরকার যাতে এ বিষয়ে আরো মনোযোগী ভ‚মিকা পালন করে, এটাও আমাদের প্রত্যাশা। শ্রীপুর, গাজীপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App