×

রাজধানী

বকেয়া ৩শ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১১ এএম

বকেয়া ৩শ কোটি টাকা

প্রতীকী ছবি।

হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে কঠোর হচ্ছে দুই সিটি।

অর্থ সংকটের মধ্যেও ৩০০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রাজধানীর ২ সিটি করপোরেশনের। হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া থাকায় পূর্ণ হচ্ছে না রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, ব্যাহত হচ্ছে নগর উন্নয়ন। তবে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে করপোরেশন দুটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ভবন মালিক ২ লাখ ৪০ হাজার। এসব ভবন মালিকের কাছ থেকে সংস্থাটির প্রতিবছর গড়ে আয় প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা। কিন্তু সর্বশেষ আর্থিক বছরের হিসাব অনুযায়ী- এ খাতে ডিএনসিসির আয় হয়েছে মাত্র তিনশ কোটি টাকা। অবশিষ্ট প্রায় দেড়শ কোটি টাকাই বকেয়া পড়ে আছে। আর দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। সংস্থাটি আদায় করেছে মাত্র ১৮২ কোটি টাকা। এতে বকেয়া রয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএনসিসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি অনেকেই ডিএনসিসির সুবিধা নিয়ে থাকেন, কিন্তু ট্যাক্স দিচ্ছেন না। এখন থেকে কঠোর অবস্থানে যাব আমরা। তবে ট্যাক্সের রেট বাড়াব না। সবাইকে এর আওতাভুক্ত করা হবে। বকেয়া পাওনা থাকলে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আমরা একযোগে চিরুনি অভিযানের এক ধাপ শেষ করেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ খুব শিগগিরই নেয়া হবে। নগরে থাকতে হলে সবাইকে ট্যাক্স দিতে হবে। আমাদের সুযোগ নেবে কিন্তু তারা ট্যাক্স দেবে না এটা তো হতে পারে না।

সূত্র জানায়, উত্তর সিটির বকেয়ার তালিকায় প্রথম সারিতে আছে ইউনাইটেড হাসপাতাল। ২০০৮-০৯ সাল থেকে নিজেদের হোল্ডিং ট্যাক্স আর পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। টাকার অঙ্কে হিসাবটা ছুঁয়েছে ২৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজারে। এছাড়াও আছে ওয়েস্টিন হোটেল, বিজিএমইএর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। নানা অযুহাতে বছরের পর বছর হোল্ডিং ট্যাক্স না দিয়েই সেবা নিচ্ছে তারা। ট্যাক্স ফাঁকির এই রাঘব বোয়ালদের দেয়া তথ্যেও রয়েছে গড়মিল। হোল্ডিং ট্যাক্স খেলাপিদের মধ্যে বাড়ির মালিকদের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের যোগসাজশে অনেকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছে বছরের পর বছর।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তিগত বাড়ির মালিকদের চেয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার কাছেই বেশি। ৪০-৫০টি সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেই পাওনা রয়েছে শতকোটি টাকা। নতুন করে যেসব ভবন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তারাও হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতাভুক্ত হয়নি। ডিএনসিসি এলাকার গুলশান-বনানীর বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর অধিকাংশের লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স নবায়ন ও ট্যাক্স আদায়ে গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী চিরুনি অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি। মেয়র আতিক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, প্রতিবছর আমাদের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চেষ্টা করি ৬০-৭০ শতাংশ ট্যাক্সের অর্থ

আদায় করতে। বাকি ৩০-৪০ শতাংশ পরের বছর আদায় করার লক্ষ্য থাকে। কিন্তু গত অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে আয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। বকেয়া আদায়ে আমরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। এতে ভালো সাড়া পাচ্ছি। অভিযানের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে নগরবাসীকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায় না হলে নগরের উন্নয়ন করে সিটি করপোরেশনের নিজের পায়ে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকার গুলশান-বনানীতে যত বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে তাদের কারোই লাইসেন্স নেই। নোটিস করা হলেও কোনো সাড়া নেই। তাই এবার কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। দেখা যাচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠানকে বৈধ মনে হয়নি সেসব প্রতিষ্ঠানকে আমরা লাইসেন্স দিইনি। কিন্তু তারা ঠিকই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে। এতে তো আমরা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছি, এবার তাদের নিয়ন্ত্রণের সময় এসেছে। এছাড়া যেসব ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া নেই সেসব মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত করা হবে বলেও জানান তিনি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) আরিফুল হক বলেন, করোনার কারণে আমাদের ট্যাক্স আদায় কম হয়েছে। তবে ট্যাক্স আদায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা ট্রাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা বাড়িতে গিয়ে গিয়ে তাগিদ দিচ্ছে। আশা করছি আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। দক্ষিণ সিটির জণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, বিনা বিলম্ব ফিতে হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি বা আগামীতেও বাড়বে না- এটা নিশ্চিত।

অন্যদিকে, কপোরেশনগুলোর চাপ থাকলেও করোনার কারণে পৌরকর পরিশোধ ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে অনেক গ্রাহকের। হোল্ডিংস মালিকদের দাবি, করোনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। যার ফলে সময়মতো পৌরকর দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে ও অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় রিবেট সুবিধাসহ পৌরকর পরিশোধ এবং সারচার্জ ব্যতীত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কপোরেশন।

মিরপুর রূপনগরে বাসিন্দা একটি হোল্ডিংসের মালিক আবু তালেব মোল্লা নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বলেন, ৪ তলা বাড়ির ৮টি ফ্ল্যাটের ৪টিই ফাঁকা। বাড়ি ভাড়া কমিয়ে এনেও ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না। এই বাড়ি ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল নেই। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। বাড়ি নির্মাণকালে নেয়া ঋণের কিস্তির পরিশোধ করতে হয়। এরমধ্যে এই করের চাপ টেনশন বাড়াচ্ছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, সমস্ত বকেয়া পাওনাদারদের হিসাব ডিজিটালাইজড করে সবার কাছে চলে যাওয়া, এমনই কিছু করা উচিত। তবে ট্যাক্স আদায়ে কৌশলে এগোতে হবে কপোরেশনগুলোকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App