×

মুক্তচিন্তা

আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন সময়ের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৫০ পিএম

এ দেশে যারা ধর্মীয় পরিচয়ে সংখ্যালঘু তারা তো এ দেশেরই নাগরিক। এ দেশেই তারা পুরুষানুক্রমে বাস করে আসছেন। এরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বলা দরকার একাত্তরে সংখ্যালঘুরা ছিলেন পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের অন্যতম প্রধান টার্গেট। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্তও মিশে আছে। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক ভাবধারাকে প্রত্যাখ্যান করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনাকে আশ্রয় করে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ বছর পরও কেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিজ দেশে পরাধীন; কেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে; অনিরাপত্তায়-অনাস্থায় কেন ভিটেমাটি ছেড়ে তাদের দেশত্যাগ করতে হবে? প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর আমাদের দেখতে হচ্ছে। গণমাধ্যমে উঠে আসছে ভয়াবহ সব চিত্র। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেলে যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়, সেটি আমরা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে দেখেছি। আবার সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীর লোকজন কেউ পিছিয়ে নেই। ‘সংখ্যালঘুবান্ধব’ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে একনাগাড়ে ক্ষমতায় আছে। এই সময়েও যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানি বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, সাঁথিয়া, দিনাজপুর এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি। অতিসম্প্রতি ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও কুমিল্লার মুরাদনগরের সংখ্যালঘু এলাকায় আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, গত সাত মাসে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ১৭ জন মৃত্যুবরণের পাশাপাশি হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে অন্তত ১০ জন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে ২৭টি। এসব চিত্র বলে দেয় এ দেশে সংখ্যালঘুরা কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশে নানা অজুহাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রধান লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে তাদের স্বভ‚মি ত্যাগে বাধ্য করা। দেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতিত-নিগৃহীত হওয়ার ও অধিকার বঞ্চিত হওয়ার এসব চিত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের দাবিকে অসাড় করে দেয়। শুধু তাই নয়, এটা বহু রক্তের দামে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মৌল চেতনার বিচ্যুতিরও প্রমাণ। দেশে ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষের পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ সাংবিধানিক দায়। এ দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাদান এবং তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আমরা মনে করি, প্রত্যেক এলাকার সব স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব সে এলাকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়া। দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বৈষম্যবিরোধী আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App