×

পুরনো খবর

ভেঙ্গী ভাইরাসের রোধে লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংস কেন জরুরি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২০, ০৪:৫৮ পিএম

মহামারি করোনার কারণে মানুষ লকডাউনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি, সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকায় স্বল্প সংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি এবং ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর বৃষ্টি এবছর এডিসের প্রজননস্থল বৃদ্ধি ও মশার পপুলেশন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এ বছর অক্টোবর মাসে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি হওয়ায় এডিসের প্রাদুর্ভাব আশংকাজনকয়ভাবে বাড়ছে। এই মশা চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু ভাইরাসের শক্তিশালী বাহক। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর খুবই যন্ত্রণায় কিন্তু মারণ ব্যাধি নয় তবে রক্তক্ষরণসহ ডেঙ্গু জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটাতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইন(ডেন-১,২,৩,ও ৪)-এর যেকোনো একটি প্রায়ই মানুষ থেকে মশা ও মশা থেকে মানুষে খুব দ্রুত ছড়ায় এবং রোগ সৃষ্টি করে।

বিশ্বের ১২৮ টি দেশের ৩.৯৭ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমনের মুখোমুখি হয়। ৫ লক্ষ রোগী রক্তক্ষরণসহ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় (ব্রাডি ২০১৩)। ডেঙ্গি জ্বরে প্রতি বৎসর ২২০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। যাদের অধিকাংশই শিশু (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ২০১৩)। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে চিকুনগুনিয়া এবং ২০১৯ এ সব জেলায় বহু মানুষ ক্ষুদ্র এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহামারী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

সাধারণতঃ জুলাই হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৃষ্টির আধিক্যের কারণে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রকোপ থাকে। কিন্তু ১৯৫৩ সালের পর ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতেই সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুন মাসেই এডিসের পপুলেশন বহুগুণে বেড়ে গিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে । ভবিষ্যতে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এরও ব্যতিক্রম হতে পারে। এই জ্বরের জন্য দায়ী ঘাতক মশা এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti পর্ব আর্থোপোডা)। এই মশকী সূর্যোদয়ের পর ২ ঘন্টা পর্যন্ত ও সূর্যাস্তের পূর্বে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত মানুষসহ অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্ত শোষনের সময় ভাইরাস ছড়ায়।

তাছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাতে দিনের মতো অধিক আলোতে এই মশা মানুষকে কামড়াতে পারে ডেঙ্গির বাহক এডিসের তিনটি প্রজাতি( Aedes aegypti, Ae.albooictus, Ae.polynesiensis) এর মধ্যে একমাত্র এডিস ইজিপ্টি প্রজাতিটি সমগ্র পৃথিবীতে ডেঙ্গি বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু Aedes albooictus স্ত্রী মশা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক এদের মধ্যে Ae.aegypti শহরে মশা অন্যদিকে এডিস Ae. albooictus জংলী মশা।

মশার জীবনচক্র চারটি দশা: ডিম (৬ মাস পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অক্ষত থাকে অত্যধিক চাপ উষ্ণতায় ডিম্বক বিনষ্ট হয়ে যায়) লার্ভা-ডিম পানির সংস্পর্শে এলে ১-২ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা হয় যা দেখতে লম্বা ও সরু কিন্তু মাথা মোটা এবং দেহে ঘন লোম এ আবৃত থাকে। লার্ভা সাধারণত ২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় উচ্চহারে বৃদ্ধি পায় কিন্তু ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর নিচে বৃদ্ধি দীর্ঘায়িত হয়। লার্ভা অবস্থায় ৮-১০দিন থাকার পর পিউপায় রূপান্তরিত হয় যা দেখতে কমার মতো। এই দশায় এরা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না। পিউপা হতে ২-৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশা জন্মায়, দেখতে কালোর উপর সাদা ডোরাকাটা, কালচে বাদামীর উপর সাদা ডোরাকাটা এবং বক্ষের পৃষ্ঠ দিকে সমান্তরালে দুটি সাদা দাগের উভয় পাশে আরও দুটি বাঁকা দাগ থাকে।

সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হতে পারে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

১। প্রজননস্থল ধ্বংস

২। প্রায় সারা বছর নিয়মিত লার্ভা ধ্বংস করা

৩। পূর্ণাঙ্গ মশা নিধন।

যখনই পার্শ্ববর্তী কোন দেশে কোন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বন্দরগুলোতে মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা ও কঠোরভাবে সর্তকতা অবলম্বন জরুরি। প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

১. বাসগৃহ ও তার আশেপাশের যে কোন পাত্রের জমানো পানি তিন দিনের বেশি না রাখা

২. যে কোন ধরনের অব্যবহৃত পাত্র ধ্বংস করা বা উল্টিয়ে রাখা যাতে পানি না জমে

৩. পাত্রের পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা থাকলে পানিসহ ফেলে দেয়া

৪. এডিস মশার সম্ভাব্য সকল বাসস্থান ধ্বংস করা বা পানি মুক্ত রাখা।

মূলত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হচ্ছে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ আর মশা নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় লার্ভা ধ্বংস। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে মশার লার্ভা এবং মশার জন্ম স্থল ধ্বংস। কাজটি আবশ্যক হিসেবে সারা বছর নিয়মিতভাবে সারাদেশে একযোগে করা। সম্ভব হলে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য আরো ভাইরাস ও রোগ জীবাণু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান প্রধান, বাড়ির মালিক তরুণ গোষ্ঠী দায়িত্ববান হলে এবং কর্মে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মী দায়িত্ব পালনে সৎ হলে সব সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করা যাবে। দেশের আর্থিক ব্যয় হ্রাস পাবে যা উন্নয়ন সহায়ক হবে এবং ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাসহ সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App