×

মুক্তচিন্তা

সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪৩ পিএম

সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ বাবা-মা সন্তানদের সময় দেন না। অনেকে সন্তানের চাওয়া-পাওয়া পূরণের মাধ্যমেই নিজের দায়িত্ব পালন সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করে থাকেন। আবার অনেকে কর্মব্যস্ততার জন্য সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। ফলে সন্তানের সঙ্গে বিরাট একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের মানসিক দূরত্ব অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের দূরত্ব কেবল শহুরে জীবনে পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামীণ জীবনেও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়।

যেখানে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো কিন্তু আজ আমরা তা দেখতে পাই না বললেই চলে। বাবা-মা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য সন্তানদের সঙ্গে সেভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। অনেক বাবা-মা সন্তানদের করা বিরক্ত থেকে দূরে থাকার জন্য সন্তানদের টিভি বা মোবাইল দিয়ে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে সন্তান অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক কর্মজীবী বাবা-মা সন্তানদের সময় দিতে না পেরে তাদের গৃহবন্দি করে রাখার জন্য সন্তানের হাতে মোবাইল বা ল্যাপটপ তুলে দেন। একসময় সন্তান সেটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আজকাল বাবা-মা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। যেটুকু দেন সন্তানকে নানা ধরনের হুকুম প্রদান করেন এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করেন। কখনো মন খুলে সন্তানের সঙ্গে গল্প করেন না। সন্তানেরা সবসময় একজন ভালো বন্ধু চায় যে তাকে সবসময় সঙ্গ দেবে, তার সঙ্গে খেলবে, গল্প করবে, আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে। সন্তানরা যখন বাবা-মাকে পাশে পায় না তখন অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এতে অনেকে অসৎ সঙ্গে যুক্ত হয় আবার অনেকে মোবাইল বা কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ে টিভিতে কার্টুন দেখতে। সন্তানের হাতে মোবাইল আর টিভির রিমোট তুলে দেয়ার কাজটা কিন্তু বাবা-মা করে থাকে। আর যখন বুঝতে পারে সেটি সন্তানের জন্য ক্ষতিকর তখন আর কিছু করার থাকে না সন্তান সেটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।

বর্তমানে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করানোর জন্য বাবা-মা সন্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। বাবা-মা সন্তানের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়। তাকে মানুষের মতো মানুষ করার লক্ষ্যে কিন্তু কখনো তাকে একজন স্বনির্ভর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় না। শিশুকে বইয়ের বাইরের জগৎ সম্পর্কে কিছু জানার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না। ফলে সন্তানের কাছে বাইরের জগৎটাকে ভয়ঙ্কর মনে হয়। সে মানসিক ব্যাধিতে ভুগতে থাকে। তাই সে সন্তানের কাছে ভার্চুয়াল জগৎটাকেই অনেক বেশি আপন বলে মনে হয়। মনোবিদদের পরামর্শ হলো সন্তানের অভিভাবক হওয়ার চেয়ে তাদের বন্ধু হওয়াটা বেশি জরুরি। শত ব্যস্ততার মাঝেও যতটুকু সময় পাওয়া যায় সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো কাটানো উচিত। তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেলামেশা করা জরুরি, প্রতিদিন সন্তানকে কিছুটা হলেও সময় দেয়া দরকার, নিজের অভিজ্ঞতাগুলো সন্তানের সঙ্গে ভাগ করে নেয়া। যতটুকু সম্ভব সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। সন্তান সারাদিন কোথায় কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, কি করে এগুলো তার থেকে জানুন। তবে কখনো জোর করে কিছু জানার চেষ্টা করবেন না। তাকে সবকিছু বলতে উদ্বুদ্ধ করুন যাতে করে আপনি না চাইলেও সে সবকিছুই বলে। সে নিজেই যেন মনে করে আপনাকে জানানো জরুরি। সন্তান কী পছন্দ করে, কী করতে ভালোবাসে, তার স্বপ্ন কী এগুলো জানুন এবং তা পূর্ণ করার লক্ষ্যে বন্ধুর মতো তার পাশে থাকুন। সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলা করুন, একসঙ্গে ঘুরতে যান, যতটুকু পারেন সন্তানকে সময় দেন। যাতে সে আপনাকে সত্যিকারের একজন বন্ধু মনে করে।

শিক্ষার্থী, দিনাজপুর সরকারি কলেজ।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App