×

সারাদেশ

বয়স বাড়িয়ে কিশোরীকে বিয়ে! তদন্তে প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২০, ০৭:৫১ পিএম

বয়স বাড়িয়ে কিশোরীকে বিয়ে! তদন্তে প্রশাসন

ছবি: ভোরের কাগজ

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে তৃতীয় বিয়ে করে দেশব্যাপী বিতর্কিত হয়ে ওঠা উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারের (৪৯) ব্যাপারে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। সাতভিটা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে ওই চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীর লালন পালন করে আসা ওই চেয়ারম্যানের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল কিশোরীর ওপর। পরে তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কিশোরীর বয়স বাড়িয়ে নিয়ে বিয়ে করেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভুক্তভোগিদের অনেকেই বলছেন আইনের প্রয়োগ শুধু গরীব অসহায়দের ওপরেই সীমাবদ্ধ। প্রভাবশালীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।

তবে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম ভোরের কাগজকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করতে এডিসি জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, চেয়ারম্যানের বাল্যবিয়ের খবর ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ওই চেয়ারম্যান কিশোরীর বয়স বাড়িয়েছেন। তার বাহিনীর লোক দিয়ে টাকার বিনিময়ে জালিয়াতি করে কিশোরীর পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষার সনদে বয়স বেশি দেখানোর জন্য কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছেন। যদিও কিশোরীর পিএসসি ও জেএসসি সনদে জন্ম তারিখ ২৩-০৯-২০০৩ উল্লেখ রয়েছে, যাতে তার বয়স ১৭ বছর ১ মাস ১১ দিন হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও শিক্ষাঅফিস নিশ্চিত করেছে।

ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে জানা যায়, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে চেয়ারম্যান আবু তালেবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এতটাই বিস্তার লাভ করে যে শুধু উপজেলা পর্যায়েই নয়, জেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় খুন, মাদক কারবার, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, ছিনতাই, রাহাজানি ও পুলিশের ওপর হামলাসহ ২২টির বেশি মামলার রেকর্ড রয়েছে। তার এমন সব অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ট।

আরো জানা গেছে, গেল বছরের ১৭ অক্টোবর রংপুর র‍্যাব-১৩ এর বিশেষ অভিযানে রংপুর শহরের প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে আবু তালেবকে বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিনসহ আটক করে সুনির্দিষ্ট মামলা দিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন বুড়াবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক খন্দকার মারা গেলে তালেব জামিনে বেরিয়ে উপ-নিবার্চনে অংশ নেন এবং চেয়ারম্যান নিবার্চিত হন। এরপর থেকেই আবু তালেব এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীদের প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি পড়তে থাকে। অনেকেই বাধ্য হয়ে তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

এক পর্যায়ে ইউপি কার্যালয়ের মাত্র একশ গজ দূরে গ্রামপুলিশ আবু বক্করের বাড়িতে তার প্রতিবন্ধী ছোট ভাই ওসমান গনি সরকার বাচ্চুর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া অসহায় কিশোরীর ওপর নজর পড়ে চেয়ারম্যান তালেবের। এরপর থেকে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ডেকে নিতো ইউনিয়ন পরিষদে।

অভিযোগ রয়েছে, সেই গ্রাম পুলিশের বাড়িতে চেয়ারম্যানের জন্য রান্নাবান্না করা হতো, যা ওই ছাত্রীর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে পৌঁছাতো। তখন থেকেই নানাভাবে ফুসলিয়ে কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন চেয়ারম্যান। মাস তিনেক আগে কিশোরীরর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে বিপাকে পড়েন চেয়ারম্যান। কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে চেয়ারম্যান নিজেকে রক্ষা করতে কৌশলে বাল্যবিয়ের আয়োজন করেন। এতে পরিবারটি রাজি না হলে মোটা অংকের মোহরানার (৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বিনিময়ে কিশোরীকে বিয়ে দিতে বাধ্য করেন।

অপরদিকে, কিশোরীর বয়স বেশি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করার ঘটনাও ফাঁস হয়েছে। অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ না করতে পরিবারের লোকজনকে মোটা অঙ্কের আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয়। এক পর্যায়ে গেল ১ নভেম্বর রাতে পরিবারের লোকজনকে রাজি করিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান আবু তালেবের স্ত্রী ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে থাকার পরও তার তৃতীয় বিয়ের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ইউপি চেয়ারম্যানের যেখানে বাল্য বিয়ে বন্ধ করার কথা সেখানে নিজেই এমন কাণ্ড ঘটানোয় এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিকসহ অসংখ্য অনলাইন পোর্টালে গুরুত্ব দিয়ে তার বাল্যবিয়ের খবর প্রকাশিত হয়। এতে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যায়। জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডাব্লিউএম রায়হান শাহ্ বলেন, আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App