×

জাতীয়

করোনার মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৪৮ এএম

করোনার মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু

প্রতীকী ছবি

দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মৌসুম না হলেও গত মাসে (অক্টোবর) বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি নভেম্বর মাসে তিন দিনেও রোগী বাড়ার সংখ্যা অব্যাহত রয়েছে। যা দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে নড়ে চড়ে বসেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এডিসের উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে চলছে চিরুনি অভিযান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দাপট দেখেছে দেশবাসী। আর চলতি বছর অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের দাপটে দিশেহারা বিশ্ববাসী। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। আসন্ন শীতে এর সংক্রমণ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলছেন, সাধারণত একসঙ্গে দুটি ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। দেশে যেহেতু করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। তাই ডেঙ্গুর সংক্রমণ খুব বেশি হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে করোনার সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। যা দুর্ভাবনা বাড়াচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৬৬৬ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬১৭ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪২ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ৪টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দুইটি মৃত্যুর পর্যালোচনা শেষে একজনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।

মাসভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ১৬৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ১৯৯, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৫ জন, মার্চ মাসে ২৭ জন, এপ্রিল মাসে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুন মাসে ১০ জন, জুলাই মাসে ২৩ জন, আগস্ট মাসে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭ জন, নভেম্বরের তিন দিনে ৩৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর মোট ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে যান চলাচল সীমিত এবং অনেক হাসপাতাল রোগী না রাখার কারণে এতদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও অনেকে পরীক্ষা করাতে পারেনি। আগস্ট মাস থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ডেঙ্গু পরীক্ষা বেড়েছে, ফলে রোগীও বাড়ছে।

শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। অক্টোবর মাসে হঠাৎ কেন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত মাসে নি¤œচাপ থাকায় বৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের জন্য সহায়ক। তবে বছরের শুরুতেই দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বেশ তৎপর ছিল বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। করোনার কারণে অনেকেই হাসপাতালে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করাননি। হাসপাতালে চিকিৎসাও নেননি। ধীরে ধীরে সেই ভয় কাটিয়ে মানুষ ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছে। এ কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অতিবৃষ্টির কারণেই অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে বলে মনে করেন ডা. আফসানা আলমগীর খান।

এদিকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। গতকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূলে ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কর্তৃক মৌসুম এডিস সার্ভে ২০২০ পরবর্তী চিরুনি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৬৪টি জেলায় এখন পর্যন্ত মোট সরবরাহকৃত ডেঙ্গু কিটের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৩০০।

এছাড়া ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টবিষয়ক জাতীয় গাইডলাইন এবং ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টবিষয়ক ফ্লুইড চার্ট দেশের ৬৪টি জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি সব হাসপাতালে এবং ঢাকার প্রধান প্রধান বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকটে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য সব হাসপাতালে যাতে আগে স্থাপিত ডেঙ্গু কর্ণার পুনরায় সক্রিয় করা হয় এবং জ্বরের রোগীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করা হয় সেই বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার চিকিৎসকদেরও জ্বরের রোগীদের কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করাতে হবে। সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট পাঠানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App