বাবা বললেন আর বোধহয় বাঁচিয়ে রাখবে না
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০১:০৮ পিএম
সিমিন হোসেন রিমি।
পঁচাত্তর সালের ২২ অক্টোবর। বাবার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মায়ের সঙ্গে পরিবারের সবাই গিয়েছিলাম। সেটাই যে সর্বশেষ সাক্ষাৎ হবে, তা বুঝতে পারিনি। সেখানে ডিবি, স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজন বসে থাকত। ওদের সামনে ঢুকেই বাবা (তাজউদ্দীন আহমদ) বললেন, ‘আমাদেরকে বোধহয় আর বাঁচিয়ে রাখবে না’। এটা বলেই তিনি হেসে দিলেন। মনে হয় প্রশান্তির হাসি। এরপর বললেন, রাতে আমি মুজিব ভাইকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বপ্নে দেখেছি। মুজিব ভাই বলেছেন, তাজউদ্দীন তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। তুমি চলে আসো। এই জিনিসটা আমার খুব মনে হয়! বাবার সঙ্গে আমাদের সেটাই ছিল শেষ দেখা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জেলহত্যা ও পিতা তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে এভাবেই স্মৃতিচারণ করেন তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি।
স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে আর জেলহত্যার ৪৫ বছর আজ। সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। আমরা সারাদিন কিছুই জানতে পারিনি। পরদিন ৪ নভেম্বর সন্ধ্যার আগে জানতে পারি জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর গভীর রাতে বাবার লাশ নিয়ে আসা হয়। সেটা ৫ নভেম্বর। ঐদিন বুধবার ছিল।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই আমাদের বাসা আর্মিরা ঘিরে ফেলেছিল। বাবাকেসহ আমাদের সবাইকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এরপর বাবাকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়ে যায়। যখন জেলখানায় বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমার আম্মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি মনে হয়, কবে ছাড়বে বা তোমার কি মনে হয়’? তখন জবাবে বাবা বলেছিলেন, ‘মনে কর চিরজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি’।
তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে আজ স্পর্শ করেছি। একাত্তরের বিজয়ী জাতি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার কন্যার হাত ধরে আজ বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়েছে। সেইসঙ্গে চার নেতারও যে আশা-আকাক্সক্ষা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো। এই জায়গা থেকে ৪৫ বছর পর আমরা এখন চিন্তা করব আমরা যেন তাদের মহৎ চিন্তা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ আমাদের জীবনাচার ও কার্যক্ষেত্রে স্পর্শ করতে পারি। তারা আমাদের একটা দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশটাকে আরো কিভাবে সুন্দর-সফল করতে পারি সেই চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে ধাবমান। এই এগিয়ে চলাটা যেন আরো সুন্দর, আরো গতিময় হয়। তবেই তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। বাংলাদেশ সামনের দিকে উজ্জ্বল সূর্যের আলোয় আলোকিত হোক। জাতীয় চার নেতার ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সবকিছুই পরিপূর্ণতা পাক। এটাই আমার একান্ত চাওয়া।