×

সাহিত্য

ফেনীর ১০০ প্রশিক্ষক এখন বেকার!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০২:২৬ পিএম

ফেনীর ১০০ প্রশিক্ষক এখন বেকার!
ফেনীর ১০০ প্রশিক্ষক এখন বেকার!
ফেনীর ১০০ প্রশিক্ষক এখন বেকার!

করোনার কারণে দেখা যাচ্ছে না এমন নৃত্য। ফাইল ছবি।

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ধারাবাহিক ৩২তম প্রতিবেদন।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মিলিয়ে ফেনী এক সমৃদ্ধ জনপদ। ফেনী নদীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। আদি শব্দ ‘ফনী’ মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের কাব্যে ‘ফেনী’ হয়েছে। ফেনীর পূর্ব দিকের রঘুনন্দন পাহাড় থেকে কাজীরবাগের পোড়ামাটি অঞ্চলে আদিকালে শিকারি মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়ে। এখানে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের অমর কীর্তি বিজয় সিংহ দীঘি, রাজাঝির দীঘি, জগন্নাথ কালী মন্দির, প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী চাঁদ খাঁ মসজিদ ও শমসের গাজীর দীঘি, ভাষা শহীদ সালাম নগর এলাকা, ৪০০ বছরের প্রাচীন কড়ই গাছ, নতুন মুন্সীরহাট বাজারে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত গান্ধী আশ্রম, মুহুরী সেচ প্রকল্প। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শহর ফেনীতেও হানা দিয়েছে করোনা।

ফেনীর সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা ৫২টি। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা ১ হাজারের মতো। তাদের অনেকে পেশায় তবলা, সংগীত, গিটার, নৃত্য শিল্পী ও প্রশিক্ষক, যারা সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনার ধাক্কায় এমন ১০০ প্রশিক্ষকই পুরোপুরি বেকার হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৫৫ জনকে অনুদান দেয়া হলেও অনেকের জীবন কাটছে দুর্বিপাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেনীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখনো স্থবির। অনন্যোপায় হয়ে কেউ কেউ বিজিবির চাল ডাল বিক্রি করে সেখান থেকে ‘কমিশন’ নিয়ে টিকে থাকছেন। কেউ কেউ ধার দেনা এবং জমানো টাকা ভেঙে চলছেন। জানতে চাইলে সুরকার-গীতিকার শান্তি চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার পর থেকে স্টেজ শো থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত টিউশনি সবই বন্ধ হয়ে গেছে। কারো কাছে হাত পেতে চাইতেও লজ্জা কাজ করছে, কিন্তু মর্মে মরে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সমাজে শিল্পচর্চা না থাকলে সাম্প্রদায়িকতা এবং অপরাধ ছড়িয়ে পড়বে, শিল্পচর্চার মাধ্যমেই যা রুখে দেয়া যায়। গিটার প্রশিক্ষক সজীব রায় বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আমরা যন্ত্র শিল্পীরা। বলতে গেলে এখন কাছের বন্ধুদের কাছে হাত পেতে পেতে চলছি। সরকারের কোনো অনুদান বা সহায়তাও জোটেনি আমার। এখন নিরুপায় হয়ে উপরওয়ালার দিকেই তাকিয়ে আছি। কবে যে করোনা থেকে উদ্ধার পাব!

দীর্ঘ ৩ দশক ধরে সংগীতাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও প্রশিক্ষক নিখিল সিকদার বলেন, শিক্ষকতাই আমার একমাত্র পেশা। আমি তো আর অন্যকোনো কাজ করি না। ফলে লক ডাউনের পড়ে সব কিছু খুলে দেয়া হলেও আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন খুলে না দেয়ায় বেকায়দায় আছি। নৃত্যশিল্পী মনি মজুমদার বলেন, জীবনটা চলছে অনেক কষ্টে। এতদিন জমানো টাকা ভেঙে চলেছি। এখন আর পারছি না। ৪ মাসের ঘর ভাড়া বাকি হয়ে গেছে। সরকারি সহায়তাও পেলাম না, অথচ বিটিভির উচ্চ গ্রেডের শিল্পী হিসেবে আমি নৃত্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতাম আগে।

ফেনী জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সমর দেবনাথ বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ এসব শিল্পীরা তো মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না। অনেক ক্ষেত্রে অভিমান করেও বলে না। ত্রাণ নিতে গিয়ে অনেকে লজ্জিত, বিব্রত হয়। কিন্তু সরকারের উচিত শিল্পীদের পাশে এসে দাঁড়ানো। শুরুর দিকে সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারি ত্রাণ দিয়েছেন। এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। তবে তা একেবারেই অপ্রতুল। আমাদের দাবি, এই সহায়তাটা অন্তত করোনাকালে মোটা দাগে দেয়া হোক, তাহলেই বেঁচে যাবে শিল্পীসমাজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App