×

সম্পাদকীয়

গুজব মহামারির শেষ কোথায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১০:১৮ পিএম

দেশের এমন চরম সংকটকালে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে গুজব ছড়ানোর কাজে। অতীতে আমরা দেখেছি, গুজব ছড়িয়ে দেশে ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন করে এমন অরাজকতা আর দেখতে চাই না। গুজব প্রতিরোধে সরকারের অবস্থানও দৃঢ়। ইতোমধ্যে সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারণকে কোনো ধরনের গুজব বা উস্কানিমূলক বক্তব্যে কান না দেয়ার অনুরোধ করেছে। কেউ যদি গুজব রটায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন তৎপরতায় আমরা স্বস্তিবোধ করছি। অতিসম্প্রতি ফ্রান্সে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন আঁকা নিয়ে উত্তপ্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশেও প্রতিবাদ করছে হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মীয় সংগঠন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ এই প্রতিবাদকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মীয় উত্তেজনা এবং উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। কোনো কোনো মহল এ ঘটনাকে অন্য খাতে নিতে চাইছে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের বুড়িমারী বাজারে কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। এর আগে রবিবার ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজবে কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ঘটনাগুলো নতুন নয়। আট বছর আগে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে ফেসবুকে গুজবের জের ধরে ১৩টি বৌদ্ধ মন্দিরে এবং তাদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর ২০১৬ সালে কুমিল্লার নাসিরনগরে ধর্ম অবমাননার গুজবে হিন্দুদের মন্দিরে এবং বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। পরের বছরই ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সহিংসতা হয়েছিল। নিকট-অতীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও এমন অপকর্ম চালিয়েছিল কেউ কেউ। গুজব ও ভুয়া খবরে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। এখন বিজ্ঞানের যুগ। এই আধুনিক সমাজব্যবস্থায় যারা এ ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে গুজব ছড়ানোর মূল উদ্দেশ্যগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে গুজব ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হিসেবে অনেকে ব্যবহার করছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে কীভাবে গুজব ছড়ানোর প্রবৃত্তি থেকে তাকে মুক্ত করা যায় এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। আমাদের দেশেও সেটি হতে পারে। এ ধরনের গবেষণায় কোন কোন মনস্তাত্ত্বিক উপাদান মানুষকে গুজবে আকৃষ্ট হতে ও গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে, সে উপাদানগুলো চিহ্নিত করে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জনগণের মাঝে গুজব সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বড় ভূমিকা রাখতে পারে দেশের মূল স্রোতধারার গণমাধ্যমগুলো। যে কোনো ভুল তথ্যের সন্ধান পেলে প্রকৃত তথ্য দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে তারাই সবার আগে গুজব মোকাবিলায় জরুরি ভূমিকা রাখতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App