×

সারাদেশ

দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য নোয়াখালী সদর সেটেলমেন্ট অফিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২০, ০৫:০১ পিএম

দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য নোয়াখালী সদর সেটেলমেন্ট অফিস

অফিসে বসেই ঘুষের টাকা নিচ্ছেন পেশকার আবু সাঈদ

নোয়াখালী সদর সেটেলমেন্ট অফিসে ছাপা খতিয়ান বিতরণ, মাঠ জরিপ ও আপত্তি শুনানীসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এনিয়ে ভুক্তভোগীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, নোয়াখালী সদর সেটেলমেন্ট অফিসে সদর, সুবর্ণচর ও কবিরহাট উপজেলার ছাপা খতিয়ান বিতরণের পাশাপাশি নোয়াখালী পৌরসভার শাহাপুর ও উজ্জলপুর মৌজার মাঠ জরিপ শেষে আপত্তি শুনাণী চলছে। এসব কার্যক্রমে ওই অফিসে খোলামেলাভাবেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। অফিসের ঝাড়দার, পিয়ন, পেশকার এমনকি উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সহযোগে গঠিত চক্রের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের ঘুষের টাকা। সরেজমিন সদর সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুরে দেখা গেছে (উপজেলা পরিষদ ভবনের উত্তর পাশের পুরোনো বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায়) অফিসের ঝাড়ুদার মো. আদিল চেয়ার-টেবিল নিয়ে বারান্দায় বসে সরকারি মূল্য ১০০ টাকার কয়েকগুন বেশি টাকা নিয়ে বিতরণ করছেন ছাপা খতিয়ান। খতিয়ান গ্রহণে অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ভুক্তভোগীদের পোহাতে হয় নানা লাঞ্ছনা। অভিযোগ রয়েছে ঝাড়ুদার আদিল দীর্ঘ সময় ধরে সদর সেটেলমেন্ট অফিসে কাজের সুযোগ নিয়ে ঘুষের টাকায় জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় জমি কিনে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা বাড়ি। মালিক হয়েছেন অঢেল অর্থের। ভুক্তভোগী ছেরাজুল হক, আবদুল বাসেত ও মো. আলী ছোটন জানান, তারা ছাপা খতিয়ান নিতে সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে বারান্দায় বসা আদিল তাদের কাছ থেকে প্রতি খতিয়ানে ৫’শ টাকা করে চায়। পরে অনেক দরাদরি করে প্রতি খতিয়ান ৪’শ টাকা করে নেন। আদিলের কাছ থেকে খতিয়ান না নিলে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলেও জানান ভুক্তভোগীরা। এরপর ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় পেশকার আবু সাঈদের রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে পেশকার আবু সাঈদ আপত্তি শুনানীর জন্য আসা আবদুর রহিম নামের এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষের টাকা আদায় করছেন। আবু সাঈদের সামনের উত্তর কোনে বসা এক নারী পিয়ন, তিনিও পর্চার নকল দেওয়ার নামে আদায় করছেন নগদ টাকা। ওই অফিসে নগদ অর্থ গ্রহনের চিত্র দেখে মনে হয়, এ যেন কোন সরকারি অফিস নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য। ভুক্তভোগী আবদুর রহিম জানান, তাদের শাহাপুর এলকায় মাঠ জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। তার জমির কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও মাঠ জরিপ শেষে প্রতিপক্ষ হয়রানীমূলকভাবে আপত্তি তোলেন। ওই শুনানী করতে উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের নাম দিয়ে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন পেশকার আবু সাঈদ। শাহাপুর ও উজ্জলপুর মৌজার একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাঠ জরিপের সময় জমির সকল কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও সদর সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেন। আবার যাদের জমির কাগজে সমস্যা আছে কিংবা সরকারি খাস জমির সাথে সংযুক্ত আছে তাদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্য করেছেন সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পেশকার আবু সাঈদ নিজেই সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে আপত্তির রায় প্রদানের নামে ঘুষের টাকার চুক্তি করেন এবং চুক্তিকৃত টাকা নিজেই আদায় করেন। তবে অফিসে বসে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এক সাথে কয়েক হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে এর কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি পেশকার আবু সাঈদ। নোয়াখালী সদর সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আবদুর রফিক ঘুষের টাকা লেনদেনে তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে জানান, ছাপা খতিয়ান প্রদানে অফিস নির্ধারিত ১০০ টাকার বেশি নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। আর এটি অফিস থেকেই নিতে হবে, অফিসের ঝাড়ুদার আদিল খতিয়ান বিতরণ করার কথা নয়। তার ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। পেশকার আবু সাঈদের বিষয়ে এই কর্মকর্তা জানান, হয়তো তিনি এক সাথে ৫০ থেকে ১০০ টা ছাপা খতিয়ান বিতরণের টাকা লেনদেন করছেন। একই ব্যক্তি এক সাথে ৫০ থেকে ১০০টি খতিয়ান কেন নিবেন এবং সেটি বৈধ কিনা? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। এ দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App