×

অর্থনীতি

তিন কারণে বাড়ছে প্রবাসী আয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৪১ এএম

তিন কারণে বাড়ছে প্রবাসী আয়

প্রতীকী ছবি

চলতি বছর ৮ শতাংশ বেড়ে বাংলাদেশে ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া সংস্থাটি বলছে, মহামারির কারণে বেশির ভাগ দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ। এটা আরো বেড়ে ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘হজ বন্ধের প্রভাব, অতিবন্যা, প্রবাসী আয়ে সরকারের প্রণোদনা’র কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। বিশ্ব রেমিট্যান্স পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রো মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর দিকে এপ্রিলে কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমে ১৪ বিলিয়ন ডলারে নামতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির কারণে বেশির ভাগ দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ। এটা আরো বেড়ে ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। প্রবাসী আয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, মেক্সিকো ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিবর্তিত পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে পেসোর অবমূল্যায়ন ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ‘হজ বন্ধের প্রভাব’ এবং কর মওকুফকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হজ বন্ধের প্রভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে আরো বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরে সংস্থাটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশের মুসলিম প্রবাসীরা হজের জন্য টাকা জমিয়ে রাখেন। কিন্তু মহামারির কারণে এবার হজ বন্ধ থাকায় তারা সেই টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির পেছনে বন্যাকেও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ও ৪৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের প্রবাসী স্বজনরা বেশি টাকা পাঠিয়েছেন। মহামারির মধ্যে এপ্রিল-জুন সময়ে শাটডাউনের কারণে অর্থ জমে যাওয়া ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনানুষ্ঠানিক (হাতে হাতে বহন) থেকে আনুষ্ঠানিক বৈধ পথে (ব্যাংকের মাধ্যমে) অর্থ আসাকেও রেমিট্যান্স বাড়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকার যে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, প্রবৃদ্ধিতে তারো ভ‚মিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রেমিট্যান্সের এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ বৈধপথে রেমিট্যান্স আনতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজীকরণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এ অঙ্ক ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সে ভর করে বাড়ছে রিজার্ভ : করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। গত সপ্তাহের শেষদিনে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে ছিল ৪১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ রিজার্ভ পাকিস্তানের চেয়ে তিন গুণ। রিজার্ভের এই কৃতিত্ব প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসের ২৭ দিনে প্রায় ২০০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে এই মহামারির মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রায় সোয়া ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। মূলত বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App