×

অর্থনীতি

জটিলতায় শ্লথ ভ্যাটের গতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:২৫ এএম

জটিলতায় শ্লথ ভ্যাটের গতি

ফাইল ছবি

ঘটা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও কার্যত এর সুফল পাচ্ছে না সরকার। ভ্যাট আদায়ে গতি আনতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পও চালু করে এনবিআর। কিন্তু নানা জটিলতায় এনবিআরের ভ্যাট আহরণের গতিও শ্লথ হয়েছে। আর অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে পোহাতে হয় নানা ধরনের জটিলতা। এসব সমস্যা সমাধানে তথ্যকেন্দ্র থাকলেও ভোগান্তির কারণে অনাগ্রহী সাধারণ ভ্যাটদাতারা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত অর্থবছরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প চালু করা হয়। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম চলছে নামমাত্র। করদাতাদের ঘরে বসে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চালু করলেও কার্যত অকেজো এই কার্যক্রম। করদাতাদের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত করার জন্য ইএফডি কার্যক্রম চালুর কথা থাকলেও বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে কার্যক্রম। এতে ভ্যাট আদায়ের গতি ক্রমশ কমছে। এছাড়া চেইন সুপার শপগুলোর ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে সেলস ডাটা কন্ট্রোল (এসডিসি) বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও এই কার্যক্রমে যেতে পারেনি এনবিআর। এছাড়া কাগজে-কলমে হেল্পলাইন চালু হলেও এর অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। একজন ভ্যাটদাতাকে ভ্যাট রিটার্ন দেয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করলে এনবিআর থেকে তাকে পাসওয়ার্ড নিতে হয়। আর হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে পাসওয়ার্ড নিতেই নতুন করে করদাতার পরিচয়সহ নানা জটিলতা পোহাতে হয়। এই কারণে অনলাইন ভ্যাট রিটার্নে আগ্রহ নেই অনেকের। ডিজিটাল এনবিআরের লক্ষ্যে ডাটা সেন্টারসহ অনেক প্রকল্প চালু হলেও নির্ভেজাল সেবা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় করদাতাদের। এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক গতি আসছে। তবে ভ্যাট আদায় আগের পর্যায়ে রয়ে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম ৩ মাসে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি ৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের আয়কর ও আমদানি-রপ্তানিতে গতি ফিরতে শুরু করলেও বেহালদশা ভ্যাট আদায়ে। লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে ব্যবসা করলেও ভ্যাট নিবন্ধন হাতেগোনা। যার কারণে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি হলেও আদায় কম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, ভ্যাট আদায়ের এই জটিলতা নিরসনে দরকার নির্দিষ্ট এলাকাকে চিহ্নিত করে একই সঙ্গে নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় সহজ হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন সিস্টেমের দোহাই দিয়ে কেউ কেউ রাজস্ব না দেয়ার সুযোগ নিতে পারে। এসব ফাঁকি বন্ধে একই কাঠামোতে এনে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যে পরিমাণে ইএফডির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে, তার পরিধি খুবই ছোট। এই কারণে ভ্যাট আদায়ে এর প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, বিকিকিনি হলেও দোকানে ইসিআর মেশিন নেই। আর ভ্যাট দেয়ার বিষয়টি অনেকে জানেন না। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা বেচাকেনা হওয়া রাজধানীর দোকানগুলোতে নেই ভ্যাট আদায়ের কোনো যন্ত্র। এসব দোকানি মাসিক ভিত্তিতে একটা পরিমাণে ভ্যাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দেন। যা সরকারি কোষাগারে জমা হয় কিনা, সেই বিষয়ে জানার আগ্রহ এসব দোকানির নেই। এতে সরকার খোদ রাজধানীতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। রাজস্ব আহরণে অনলাইন পদ্ধতিকে এনবিআর উৎসাহিত করলেও রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারেও ভ্যাট আদায়ের পদ্ধতি চলছে ম্যানুয়ালি। ভ্যাটের এই জটিলতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এই সুযোগ নেয়া থেকে বাদ নেই চেইন শপগুলোও। ফাঁকি বন্ধে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সারাদেশে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে মি. বেকারের বিরুদ্ধে কাগজপত্র ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। আরেকটি বড় অনলাইন শপ ফুডপান্ডার নামেও ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ভোরের কাগজকে চেইন শপ মি. বেকারের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভ্যাট ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App