×

সারাদেশ

চন্দ্রগঞ্জে সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নেই একটিও হাসপাতাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৬:১০ পিএম

চন্দ্রগঞ্জে সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নেই একটিও হাসপাতাল

একটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকার ৯টি ইউনিয়নের সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারিভাবে এখনও কোনো হাসপাতাল স্থাপিত হয়নি। বেসরকারি পর্যায়ে ২/৩টি হাসপাতাল স্থাপিত হলেও সেখানেও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় উন্নত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে বাধ্য হয়েই চিকিৎসার জন্য এই এলাকার রোগীদের যেতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে অথবা ৩৫ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালীর মাইজদীতে। এতে যথাসময়ে হাসপাতালে না পৌঁছানোর কারণে প্রসূতি রোগী ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহতসহ মুমূর্ষু অনেক রোগী পথেই মারা যায়।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন, অচিরেই যেন এখানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়।

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রগঞ্জ থানা শহর থেকে জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এরমধ্যে দুর্গম দুটি ইউনিয়ন চরশাহী ও কুশাখালী থেকে জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। অন্যদিকে নোয়াখালী জেলা শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। যার কারণে এসব ইউনিয়ন থেকে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। ফলে সংকটাপন্ন অনেক রোগী হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।

২০১৪ সালের ২ই জুন মন্ত্রীসভার বৈঠকে চন্দ্রগঞ্জ থানা নামে একটি পুর্ণাঙ্গ থানা অনুমোদন পায়। থানা অনুমোদনের ছয়বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সরকারি কোনো হাসপাতাল নির্মিত হয়নি। চন্দ্রগঞ্জ থানা শহরটি লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী এই দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকার মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রয়েছে হাইওয়ে মহাসড়ক। এ সড়কে প্রায় পরিবহন দুর্ঘটনায় অনেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যাচ্ছেন।

থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকে চন্দ্রগঞ্জে একটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও শুক্র ও শনিবারসহ এটি বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে।

ভূক্তভোগী স্থানীয়রা জানায়, রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকেন। এরপর তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ করে চলে যান। তবে এখানে শাহিনুর আক্তার নামে এমবিবিএস পাশ একজন ডাক্তার (মেডিকেল অফিসার) সপ্তাহে দুদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে আরও দুজন আছেন। কিন্তু উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ইউনিয়নের একপাশে আমানী লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত হওয়ায় যোগাযোগের অসুবিধার কারণে সবাই এখান থেকে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না।

চন্দ্রগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাও: মো. আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকার ৯টি ইউনিয়নে সাড়ে লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করছেন। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল দরকার।

তিনি বলেন, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারির জন্য এবং দুর্ঘটনা কবলিত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপন একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানা শহরে অবস্থিত জেলার প্রথমস্থান অধিকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় শিক্ষার্থীরা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েরা শারীরিক নানা সমস্যার কারণে স্কুলে আসার পরে অসুস্থ্য হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু লক্ষ্মীপুর বা নোয়াখালী শহরের হাসপাতালে নিতে অনেক দেরি হয়।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, বিশাল এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য চন্দ্রগঞ্জে আসলেই একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হাসপাতাল দরকার। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, আপনারাও গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন। আমরা চেষ্টা করছি চন্দ্রগঞ্জে যেন একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App