×

মুক্তচিন্তা

ফলপ্রসূ উদ্যোগ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম

একজন পোশাক শ্রমিকের সর্বনিম্ন আয় মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তার ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল নিয়ে মোট খরচ সাড়ে চার হাজার টাকা। চিকিৎসা ব্যয় ও অন্যান্য মিলে আরো দেড় হাজার টাকা। মা-বাবাকে তার দিতে হয় কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। আর থাকে দেড় হাজার টাকা। এর মধ্যে চাল কিনতে হয়, ডাল, আলু, পেঁয়াজ অন্যান্য সবজি, মাছ, মাংস এবং অন্য সব খাওয়ার উপকরণ কিনতে হয়। দাম একেবারে কম থাকলেও এই টাকায় দুজনের পরিবার চলা প্রায় অসম্ভব। আমিষের অভাব মেটানো তো দূরে থাক সম্ভব না সামান্য ডিম বা ডালের জোগান দেয়াও পুরো মাসের জন্য! শুধু পোশাক শ্রমিক বা দিনমজুরই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে করোনায় কাজ হারানো অনেক মানুষের সারি। যাদের কোনো টাকাই বর্তমানে আয় নেই তারা এই বাজার দরে কীভাবে সংসার চালাচ্ছে? বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা! এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে আলোচনাই এখনো বড় মাধ্যম হিসেবে দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে পেঁয়াজের দাম কমবে, আলুও হাতের নাগালে থাকবে। কিন্তু এদিক থেকে মানুষের অবস্থা অনেকটাই দুর্দশাগ্রস্ত। চাল আমাদের উৎপাদন হয়, আলুও প্রচুর উৎপাদন হয়, পেঁয়াজ উৎপাদনেও বড় সফলতা আছে। চাহিদার তুলনায় এগুলো উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে ধানের মতো এই ফসলগুলোও আরো বেশি পরিমাণ জোগান রাখা প্রয়োজন সরকারের। বর্তমানে সবজি উৎপাদন কমে যাওয়ার বড় কারণ বন্যা, বৃষ্টি ও পানি। কিন্তু উঁচু জায়গায় যে সবজি উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো কি কম ব্যয়ে বাজারে পৌঁছতে পারছে? কৃষকদের দাম এবং ভোক্তা পর্যায়ে দামের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা প্রয়োজন। বাজারে তদারকি বাড়ানোতে যেমন গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন সিজন অনুযায়ী সব সবজির সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয়া। এখন ফুলকপি কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, কোথাও ৭০, কোথাও আবার ৪০ টাকা। এ বিষয়গুলোর সহজ সমাধান প্রয়োজন। নইলে কোনো পণ্যেরই দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় ভেবে দেখা প্রয়োজন। সেটা হলো সস্তা কিছু সবজি আছে যা প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। এগুলো গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছতে পারলে অনেকেই সস্তায় সবজি ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারবে। এই সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কলমি শাক, বইতা শাক, হেলেঞ্চা শাক, কচু ও কচু শাক, শাপলা, সজিনা ইত্যাদি। যদিও সজিনা এখন দামি সবজি কিন্তু এর উৎপাদনে তেমন কোনো শ্রম না দিলেও অনেক বেশি করে ধরে গাছে যার কারণে সহজে পাওয়া সম্ভব। কৃষি বিভাগকে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। যাতে যে কোনো সবজি বাজারে বেশি আমদানি করে অন্য সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর আমদানিনির্ভর যে ফসলগুলো আছে সেগুলো উৎপাদনে আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। যেমন গত বছর পেঁয়াজের পরিবর্তে চিভের কথা উঠে এসেছিল। কিন্তু এবার চিভের কোনো আওয়াজই পাওয়া গেল না। অর্থাৎ ফসলটি জনপ্রিয় করা যায়নি। যাই হোক দ্রব্যমূল্য এখন কমানোই বড় টার্গেট। কারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে এই করোনায়। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের উচিত এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা আরো বাড়ানো। সরকারের কম দামে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ততা কমাতেও নেয়া প্রয়োজন ব্যবস্থা। সরকার বিভিন্ন পণ্যের দাম কমে দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা কেন পারছেন না এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি। আশা করি সামনের দিনগুলোতে এ ব্যবস্থাপনায় আরো গতি আসবে ও উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্রে দামের নিয়ন্ত্রণহীনতা কমবে। শ্রীপুর, গাজীপুর [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App