×

সারাদেশ

মেধাবী ‘রিশানরা’ কেন অন্ধকার জগতে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০৪:২৭ পিএম

মেধাবী ‘রিশানরা’ কেন অন্ধকার জগতে!

কিশোর অপরাধী

মেধাবীরা যখন অপরাধী হয়ে ওঠে তখন তারা ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে। আর যেকোনো ধরনের অপরাধে যখন মেধার সমন্বয় ঘটে তখন তা হয় নিপুণ, নির্ভুল। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের বেগ পেতে হয় সে অপরাধের রহস্য উৎঘাটন করতে। মারদাঙ্গা আর অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমাগুলোতে এসব কাহিনি আমরা দেখি।

আবার দেখা যায়, মেধাবীরা যখন উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে তখনও তাদের অমানবিকতা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনে। তাদের বাগে আনা যেমন কঠিন হয়ে পড়ে, তেমনি সমাজের জন্য তা মহাবিপদ ডেকে আনে। আর তাদের পরিবারেও নেমে আসে অন্ধকার। সমাজে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় পরিবারের সদস্যদের।

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে ১৪ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। এসব কিশোর অপরাধী মামলায় অভিযুক্ত হয়। এরপর তাদের নামে চার্জ গঠন করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) তাদের মধ্যে ৬ জনের ১০ বছর করে, ৪ জনের ৫ বছর করে আর একজনের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর ৩ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত এসব কিশোরী আসামির শিক্ষাজীবন ঘেঁটে অবাক হতে হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই মেধাবী ছাত্র। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগিতা, তথ্যপ্রযুক্তি-সবক্ষেত্রেই তুখোড় মেধাবী। কেউ কেউ আবার খেলাধুলাতেও পারদর্শী।

বিশেষ করে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান কিশোর আসামি রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। স্কুলে তার দারুন সুমান ছিল, শিক্ষক-অভিভাবকরা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। গেল বছরে রিফাত শরীফ হত্যাকণ্ডের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। সেই বয়সেই রিশান জড়িয়ে পড়েছিল মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে।

রিশানের মতোই পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই কিশোর আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার ও নাঈম। আবার মামলায় অভিযুক্ত বাকপ্রতিবন্ধী জয়চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন, আবু আব্দুল্লাহ রায়হান, রাতুল সিকদার জয়ও ছিল অদম্য মেধাবী।

মামলার আরেক অভিযুক্ত আরিয়ান হোসেন শ্রাবণকে অদম্য মেধাবী বলা না গেলেও দাবা খেলায় সে ছিল বিশেষ পারদর্শী। একাধিকবার সে প্রথম পুরস্কারও পেয়েছে। এসব মেধাবীর সবাই পরিবারের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল। বন্ধু-বান্ধব আর শিক্ষকদের কাছেও ছিল সম্ভাবনাময়।

তবে সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক মেরুকরণের পাশাপাশি পরিবারের অসতর্কতা, উদাসীনতার কারণে তারা অন্ধকার জগতে পা রেখেছে। ভয়ঙ্কর মাদকের ছোবলে জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। তাদের অদম্য মেধা আর প্রতিভা হারিয়ে গেছে অপরাধের ভয়াল থাবায়। অসীম সম্ভাবনাময় এসব মেধাবীর জীবন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে।

বর্তমানে দেশজুড়ে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে। কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না তাদের। এরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন আর ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে রয়েছে সম্ভাবনাময় অনেক মেধাবী। তারা জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

একই প্রশ্ন বার বারই উঠছে, আমরা কেন রিশানদের আটকাতে পারছি না? কেন তারা আলোর পথ ছেড়ে অন্ধকারে ছুটে চলে? কারা তাদের সে পথে নিয়ে যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই জানা। সমাজেরই এক শ্রেণির প্রভাবশালীর কারণে তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ক্ষমতা আর দাপটের মোহ তাদের পেয়ে বসে। এজন্য তারা কোনো কিছু না বুঝেই ভয়ঙ্কর ফ্যান্টাসির জগতে ঢুকে পড়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App