×

সারাদেশ

সোনাহাট স্থলবন্দরে ৫ হাজার পরিবারের ৩ শত বিঘা জমি দখলের চেষ্টা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৩:৩০ পিএম

সোনাহাট স্থলবন্দরে ৫ হাজার পরিবারের ৩ শত বিঘা জমি দখলের চেষ্টা!

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দর এলাকায় এ জমিগুলো অধিগ্রহণ ছাড়াই দখল প্রক্রিয়া সম্পণ্ণ

সোনাহাট স্থলবন্দরে ৫ হাজার পরিবারের ৩ শত বিঘা জমি দখলের চেষ্টা!

কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকার ৫ হাজার পরিবারের কৃষি ও বসতভিটার ৩'শ বিঘা জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী এসব পরিবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে কুল কিনারা করতে না পেরে অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বর্তমানে বসত বাড়িসহ কৃষিজমি হারানোর আতঙ্কে অসহায় পরিবারগুলো কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভান্ডার থেকে সোনাহাট স্থলবন্দরগামী রাস্তাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় একাধিক বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, রাস্তার নির্মাণ কাজ চলাকালীন অল্প সময়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ায় মালিকানাধীন জমিগুলো আর অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে এসব জমির প্রকৃত মালিকরা তৎকালীন সরকারের অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বাইরেই থেকে যায় এবং এসব ভূমি মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এদিকে রাস্তার জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন অবস্থায় থেকে যায়। পরবর্তী সময়ে উল্লেখিত জমি স্ব-স্ব জমির মালিকের নামে এস.এ রেকর্ড চূড়ান্ত হয়। এরপর তৎকালীন সরকারসহ পরবর্তী সময়ের সবগুলো সরকারের আমলে সকল ভূমি আইন মেনে জমির মালিকগণ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আসছে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের আমলে মাঠ জরিপের সময় জনস্বার্থে রাস্তাটি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডভুক্ত করে এবং রাস্তার দুই ধারের জমি স্বত্ব দখলীয় মালিকগণের নামে যথারীতি রেকর্ড প্রদান করা হয়।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে তৎকালীন ভূরুঙ্গামারী ভূমি অফিসে কানুনগো হিসেবে কর্মরত জাহিদুল ইসলাম (বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা) নিজ হাতে কিছু কাগজপত্র তৈরি করে -সামরিক ভূ-সম্পত্তি নর্দান সার্কেল বগুড়া সেনানিবাসকে তাদের জমি বলে প্রচার করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের নামীয় রাস্তার দুই ধারের বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি তাদের বলে দাবি করেন। এ অবস্থায় সেখানে ভূমি মালিকদের ভাগ্যে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

অন্যদিকে কাগজপত্রে দেখা যায়, ৩২নং বাগভান্ডার ও ৪৪ নং দেওয়ানের খামার মৌজার তসদিক চলাকালে উপরে উল্লেখিত সামরিক দপ্তর হতে সেটেলমেন্টে ডিসপুট কেস দিলে তৎকালীন ভূরুঙ্গামারী সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার তাদের কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ডিসপুট কেসগুলি না মঞ্জুর করে ব্যক্তি মালিকদের নামে রেকর্ড বহাল রেখে ডিপি খতিয়ান প্রস্তুত করেন।

৪৫ নং গছিডাঙ্গা, ৪৬ নং পাইকেরছড়া ও ৬৪ নং বানুরকুটি তিনটি মৌজায় সামরিক ভূ-সম্পত্তি দপ্তর বগুড়া ৩০ ধারা আপত্তি কেস দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে ৪৬ নং পাইকেরছড়া মৌজা ও ৪৫নং গছিডাঙ্গা মৌজার আপত্তি কেসগুলো শুনানি অন্তে তৎকালীন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বগুড়া সামরিক ভূ-সম্পত্তি প্রশাসক নর্দার্ন সার্কেল তাদের দায়েরকৃত ৩০ ধারা আপত্তি কেসের স্বপক্ষে কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় কেসগুলো নামঞ্জুর করে ব্যক্তি মালিকানা রেকর্ড বহাল রাখেন। বগুড়া সামরিক ভূ-সম্পত্তি প্রশাসক নর্দার্ন সার্কেল সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপনে ব্যার্থ হওয়ায় ভূরুঙ্গামারী সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের কাছে ১ বছর সময় প্রার্থনা করেন। ভূরুঙ্গামারী সেটেলমেন্ট অফিসার গত ০৮.০৭.২০২০ তারিখে ৫০(২) স্মারকে রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকে বিষয়টি অবগত করলে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গত ১২.০৮.২০২০ইং তারিখে ৫১৮নং স্মারকে সময় না দিয়ে নালিশী ৫টি মৌজার আপত্তি কেসগুলো বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে রংপুর সেটেলমেন্ট অফিসার ভূরুঙ্গামারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।

এ ব্যাপারে স্বত্ব দখলীয় ভূমি মালিক কমিটির আহ্বায়ক তাইফুর রহমান মুকুল জানান- বগুড়া ভূ-সম্পত্তি প্রশাসক সেনানিবাস নর্দার্ন সার্কেল গত ২৫/০৯/২০২০ইং তারিখ আবারো ভূরুঙ্গামারী সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে উক্ত ব্যক্তি মালিকানা ৩'শ বিঘা জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনূকুলে রেকর্ডভূক্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত এবং বে-আইনি। এ অবস্থায় আমরা স্থানীয় নিরীহ অসহায় মানুষ আমাদের ভূমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ভূরুঙ্গামারী সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার লতিফুর রহমান জানান-৫টি মৌজার মধ্যে পূর্বের ডিসপুট (তসদিক) ও বর্তমান ৩০ ধারার আপত্তি মামলার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। চলতি অক্টোবরের ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখ শুনানি হবে। যারা বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করবেন রায় তাদের পক্ষে যাবে।

এব্যাপারে কথা হলে ভূরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই পক্ষই উক্ত জমি দাবি করলেও কাগজপত্রের বৈধতার ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনায় এর সমাধান করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App