×

সারাদেশ

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০ শিক্ষকের ২২ অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০৮:২৬ পিএম

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০ শিক্ষকের ২২ অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান। ছবি: প্রতিনিধি।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষককর্মচারীদের স্কুল থেকে দেয়া ভাতা গত ১৯ মাস স্থগিত রাখার অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষক সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ২২টি অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার দুপুরে (২৪ অক্টোবর) স্থানীয় মোগল না‌মের মিনি চাইনিজ রেঁস্তরায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ২০ জন শিক্ষককের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক খামখেয়ালিভাবে পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। গেল ১৯ মাস ধরে শিক্ষকদের স্কুল প্রদেয় বেতন-ভাতাদি বন্ধ করে রেখেছেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া অনুদা‌নের দুই লাখ টাকার কোনো কাজ না ক‌রি‌য়ে তিনি আত্মসাত ক‌রেন। একই বছর তার আত্মীয়ের বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা অবৈধভাবে প্রদান করেন। চলতি বছরের বিদ্যালয়ের ম্যাগাজিন প্রকাশ বাবদ যে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকার বিল ভাউচার দেখিয়েছেন বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।

আরো অভিযোগ করা হয়, বিদ্যালয়ের অর্থে নির্মিত কে এম লতীফ সুপার মার্কেটে ৬৫০টি দোকান বরাদ্দ বাবদ স্টলপ্রতি আড়াই লাখ টাকার জায়গায় তিন লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আয়সহ বিদ্যালয়ের ফান্ডে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা গচ্ছিত থাকার কথা থাকলেও তা এখন প্রায় শূন্য।

বিদ্যালয়ের নেটিজেন নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানকে লাখ লাখ টাকা প্রদানের বিল ভাউচার করা হলেও আজও পূর্ণাঙ্গ সুবিধা মেলেনি। অথচ এ খাতে শিক্ষার্থী প্রতি তিনশ টাকা হারে উত্তোলন করেছেন। নিজস্ব মোটরসাইকেলে চলাফেরা করেও ভুয়া ভাউচার করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর বিদ্যালয় ফান্ড থেকে প্রতি মাসে তিনি ১৯ হাজার ৩৪৫ টাকার নানা ধর‌নের ভাতা উত্ত‌লোন ক‌রে থা‌কেন। সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীকে লাথি মারার ঘটনায় তার অপসারণ দাবি করে ছাত্র আন্দোলন হয়। এ ঘটনার শিক্ষক‌দের অহেতুক দায়ী ক‌রে নানাভাবে হয়রানি করে আস‌ছেন। এমনকি শিক্ষকদের রুমে পুলিশ এনে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। তিনি সম্মানিত শিক্ষকদের নীতিহীন বলে গালিগালাজ করেন।

প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে আমির সিরাজী নামে এক ভাড়াটে মামলাবাজকে দিয়ে পিরোজপুর আদালতে মামলা দায়ের করিয়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন স্থগিত করিয়েছেন। তিনি বিদ্যালয় জাতীয়করণে হাই‌কো‌র্টে মামলার নামে ১৮ লাখ টাকা অপচয় করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে সব আয় ব্যয়ের হিসাব দেয়া পূর্বক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষকরা অভিযোগ করে ব‌লেন, তা‌দের বিরু‌দ্ধে থানায় জি‌ডিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কা‌ছে মিথ‌্যা অভিযোগ দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অমল চন্দ্র হালদার, বর্তমান সহকারী শিক্ষক নুর হোসেন ও এনামুল হক।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। বলেন, বর্তমানে নিয়মিত কমিটি না থাকা, আদালতে মামলা চলমান ও ফা‌ন্ডে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার কার‌ণে সাময়িকভাবে ভাতা স্থগিত রয়েছে। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, বিদ্যালয়ের মার্কেট উন্নয়ন কাজের খরচ বাবদ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বিভিন্ন দোকানে বকেয়া রয়েছে যা প‌রি‌শোধ করা জরুরি। তিনি দাবি করেন, তার মাধ‌্যমে যা খরচ হ‌য়ে‌ছে সে হিসেবের ভাউচার তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App