×

সাহিত্য

নাট্যদলগুলো দ্বিধা আর শঙ্কায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৭ এএম

নাট্যদলগুলো দ্বিধা আর শঙ্কায়

হাছন জানের রাজা নাটকের একটি দৃশ্য -ফাইল ছবি

শীতে খেজুরের রস আছে, পাটালি গুড় আছে, কোঁচাভর্তি মুড়ি-মুড়কি আছে, পিঠা-পায়েস- আছে বইমেলা, পিকনিক। আর আছে নাটক। মফস্বল থেকে শহর সমস্বরে জানিয়ে দিচ্ছে, সকালের মিঠে রোদ্দুরে ভালো থাকে শরীর। আর সন্ধ্যার পরে নাটকের ওমে ভালো থাকে মন। কারণ নাটকের মঞ্চে ব্যক্তি মানুষ নিজেকে দেখতে পায়। জীবনের নিত্য নতুন জটিলতা দু-হাত দূর থেকে প্রত্যক্ষ করে দর্শক আর কুশীলব একাকার হয়ে যায়। কিন্তু করোনায় এবার কোথায় যেন সুরটা কেটে যাচ্ছে! তবে, শীত মৌসুম এলে সক্রিয় হয়ে উঠত দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। মিলনায়তন, মঞ্চ ও নাট্যশালাগুলোতে নতুন নতুন পরিবেশনা নিয়ে হাজির হতো সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ভিড় বাড়ত সাংস্কৃতিক ও নাট্যমোদীদের। উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় গোটা রাজধানী। কোনো কোনো মঞ্চে চলে টানা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবও। শীত মৌসুম ঘিরেই রাজধানীর মিলনায়তন ও মঞ্চগুলোও সরগরম হয়ে ওঠে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে নাট্যদলগুলো নাট্যমেলা কিংবা উৎসবের আয়োজন নিয়ে এখনো রয়েছে দ্বিধা আর শঙ্কায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ওপরই নির্ভর করছে সব পরিকল্পনা আর আয়োজন। বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া তথ্যমতে, শিল্পকলাসহ বিভিন্ন মঞ্চ ও মিলনায়তন খুলে দিলেও বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার শীত মৌসুম ঘিরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রস্তুতি এবং আয়োজন তেমন নেই। অথচ শীত মৌসুম শুরুর বেশ আগে থেকেই উৎসবমুখর হয়ে উঠত মঞ্চ ও মিলনায়তনগুলো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে নাট্যমঞ্চ নতুন করে চালু হওয়ার পরও নাট্যাঙ্গনে যেমন উৎসাহ সৃষ্টি হওয়ার কথা তাও নেই। সবারই অপেক্ষা স্বাভাবিক পরিস্থিতির। একইভাবে মহানগরীর নাট্যমঞ্চগুলোতেও উৎসবের ঢেউ লাগে। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মঞ্চ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনসহ বেশ কয়েকটি মঞ্চে শুরু হয় নাটক প্রদর্শনী। এসব মঞ্চে নিত্যদিনই চলে কোনো না কোনো নাট্যসংগঠনের নতুন প্রদর্শনী। কিন্তু এবার সেসব আয়োজনেও করোনার শঙ্কা।

এ বিষয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, সীমিত পরিসরে মিলনায়তনগুলো খুলে দিলেও উৎসব বোধহয় এবার করা যাবে না। আমি প্রচণ্ড রকম দ্বিধায় আছি। কারণ উৎসব মানেই তো বহু মানুষের সমাগম। বহু মানুষের সমাগম না হলে তো উৎসবই ফ্লপ। এ বছর উৎসবের কথা ভুলে গেছি। কারণ টাকাও এ মুহূর্তে একটা ফ্যাক্টর। ব্যাংকসহ যেসব প্রতিষ্ঠান এসব আয়োজনে স্পন্সর করত তারা তো টাকা দেবে না। বিভিন্ন ব্যাংক ইতোমধ্যে বলেই দিয়েছে তারা কোনো বিজ্ঞাপন বা স্পন্সর দেবে না। সব দিক থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমরা ঢাকা থিয়েটারের পক্ষ থেকে একটা নতুন নাটক শুরু করছি। তবে কোনো নাট্য উৎসব কিংবা নাট্যমেলার কথা ভাবছি না। এখন সেরকম পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি। নাট্যব্যক্তিত্ব লাকী ইনামের কণ্ঠেও একই সুর ধ্বনিত হলো।

তিনিবলেন, প্রতিবছরই আমরা নাট্যমেলার আয়োজন করে থাকি। কিন্তু প্রতিবছরের মতো এ বছরের পরিবেশ অনুকূলে নেই। হলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে বটে। এর ওপরই নির্ভর করছে দর্শক কতটা ভরসা করে নাটক দেখতে আসবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়ত ভাবাও যেতে পারে। তবে আরো একটু অপেক্ষা করতে হবে। উৎসবের চাইতেও বড় কথা হচ্ছে- করোনা কতটা কমে আসল তার ওপরই মূলত নির্ভর করছে সব পরিকল্পনা। পদাতিক নাট্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাজী রফিক বলেন, প্রতিবছর নাট্যমেলার আয়োজন করলেও এ বছর নাট্যমেলা করার সম্ভাবনা নেই। করোনার কারণেই নাট্যমেলা নিয়ে কোনো আলোচনাই করিনি। করোনা চলে গেছে, করোনা নেই ইত্যাদি মানুষ যত কথাই বলুক, সামনের সময়টা আরো খারাপই আসবে। যে কারণে আমরা উৎসবের ঝুঁকিটা নিতে চাচ্ছি না।

নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে শঙ্কিত। চারদিকে শোনা যাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা আছে। যে কারণে ১ পা এগুলে ৩ পা পেছনে চলে আসছে। তারচেয়ে ভাবলাম শীতটা যাক। সম্প্রতি আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীই নীরবে চলে গেল, আমরা একত্রিতই হতে পারলাম না। উৎসবের কথা ভাবতেই পারছি না।

প্রাচ্যনাটের আজাদ আবুল কালাম বলেন, আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তই নেইনি। কারণ, করোনা পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তার ওপরই নির্ভর করছে সব পরিকল্পনা। এমনিতে আগে থেকে নতুন নাটক নামানোর প্রস্তুতি আছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপরই। নাট্যকর্মী চন্দন রেজা বলেন, সব কিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপরই। উৎসব নয়, তবে নিয়মিত প্রযোজনা প্রদর্শনী চলবে। তাও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নাট্যকর্মী মীর জাহিদ বলেন, দর্শককে হলমুখী করতে নভেম্বরে নাট্য উৎসবের আয়োজন করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপরই।

ভারত-বাংলাদেশের সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় ও দুদেশের মৈত্রীর বন্ধন আরো সুদৃঢ় করার মানসে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে মুখর করে তোলে উভয় বঙ্গের শিল্পীরা। ২০১২ সাল থেকে আয়োজন করা বৃহৎ ওই নাট্যোৎসবের পর্দা উঠবে না এবার।

এ প্রসঙ্গে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বললেন, করোনার কারণে এবার ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’-এর আয়োজন এ বছর হচ্ছে না। আগামী বছরই হবে।

শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানান, চলতি শীত মৌসুমের বেশ আগে থেকেই শিল্পকলায় অনুষ্ঠান আয়োজন বাড়বে। নাটক ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে শিল্পকলা চত্বর এমন আশাই করছি। তবে সব কিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপরই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App