×

সারাদেশ

নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে সচল চট্টগ্রাম বন্দর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ১০:১১ পিএম

সরকারের মধ্যস্থতায় মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর কাজে যোগ দিয়েছেন পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গর ও কর্নফুলী নদীতে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই লাইটারেজ জাহাজগুলো আবার সচল হয়ে উঠেছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারনে পুরোদমে নৌ চলাচল শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি তিনদিনের টানা ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে যে জাহাজ জট সৃষ্টি হয়েছে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন লাগতে পারে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মালিক-শ্রমিকপক্ষ ও সরকারের সাথে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার পর নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিকদের মাঝে পৌছায়। এরপর শ্রমিকদের সকলে কাজে যোগ দিতে না পারলেও আজ শুক্রবার সকালে সকল শ্রমিক কাজে দিতে যোগ দেবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ১১ দফা দাবিতে গত তিনদিন ধরে চলমান ধর্মঘটের কারণে সারাদেশের নৌপথে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে পণ্য ওঠানামা খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ধর্মঘটের কবলে পড়ে ঘাটে ঘাটে পণ্য নিয়ে অলস বসে ছিল লাইটার জাহাজগুলো। চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে আটকা পড়ে ৬০টি মাদার ভেসেল। এসব জাহাজে রয়েছে ১০ কোটি টন পণ্য। এই মাদার ভেসেলগুলোর প্রতিটিকে চট্টগ্রাম বন্দর ডেমারেজ দিতে হয়েছে ১০ হাজার ডলার করে। সে হিসেবে ৬০টি মাদার ভেসেল গুণতে হয়েছে দৈনিক ৬ লাখ ডলার।

চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নবী আলম বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও মালিকপক্ষের সঙ্গে ঢাকায় আমাদের সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তে মালিকপক্ষ আমাদের খাদ্য ভাতা দিতে রাজি হয়েছে। এছাড়াও মালিকপক্ষ আসন্ন অক্টোবর থেকে জাহাজের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের খোরপোশ দিবে। সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে ১১ দফা মেনে নেয়ার হবে বলে জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল শ্রমিক কাজে অংশ নেবে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল হক চৌধুরী জানান, ধর্মঘটের কারণে বন্দরের ডেমারেজসহ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি অপূরণীয়। বন্দরের আউটারে ৬০টি মাদার ভেসেলে ১০ কোটি টন পণ্য আটকে ছিল।’

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। নৌযান মালিকদের পক্ষে কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দিন, বিআইডবি্লউটিএ চেয়াররম্যানও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ১১ দফা দাবি আদায়ে গত ১৯ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে নৌযান শ্যমিকরা। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটে নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠন সংহতি জানায়। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে পণ্য ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়।

১১ দফা দাবিগুলো ছিল- বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান, সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুননির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ, প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন, মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা, নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App