×

মুক্তচিন্তা

দেবীর আগমনে অশুভর বিদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ০৫:২০ পিএম

শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গোৎসব। আজ সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

এ বছর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর। পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা হচ্ছে না। পূজা হচ্ছে কার্তিক মাসে। সেই হিসাবে এবার দেবী দুর্গা ‘মর্ত্যে আসছেন’ মহালয়ার ৩৫ দিন পর।

পণ্ডিতরা বলছেন, শরৎকালের প্রথম শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে মহালয়ার দিনে দেবীঘট স্থাপন করে শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। শরৎকালের এ পক্ষকে দেবীপক্ষও বলা হয়ে থাকে। শাস্ত্রে আছে, দেবীদুর্গা হিমালয়বাসিনী দক্ষরাজার কন্যা। পিতৃগৃহে আগমন উপলক্ষে ষষ্ঠীর দিনে বিজয় শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে মর্ত্যলোকে মা দুর্গার আগমনকে স্বাগত জানানো হয়। এটিই দেবীর বোধন। এরপর যথাক্রমে মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ, অষ্টমীতে কুমারী ও সন্ধিপূজা এভাবে নবমী পার হয়ে দশমীর দিনে দেবী বিসর্জন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও পক্ষকাল চলে বিজয়া পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিভিন্ন লোকজ উৎসব।

দেবী দুর্গার সৃষ্টি-রহস্যসমৃদ্ধ শাস্ত্রগ্রন্থ শ্রীশ্রী চণ্ডীতে উল্লেখ আছে, ব্রহ্মা মহিষাসুরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দিয়েছিলেন কোনো পুরুষ তোমাকে বধ করতে পারবে না। ব্রহ্মার বর পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মহিষাসুর। একে একে বিতাড়ন করেন স্বর্গের সব দেবতাকে। উপায়ন্তর না পেয়ে দেবতারা অবশেষে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। কিন্তু কী করবেন তিনি। নিজের দেয়া বর ফেরাবেন কী করে? এ অবস্থায় শিব ও অন্যান্য দেবতা সঙ্গে নিয়ে ব্রহ্মা যান স্বয়ং বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণু তাদের দুর্দশার কথা শুনে দেবতাদের বলেন, দেবতাদের নিজ নিজ তেজকে জাগ্রত করতে হবে। তখন দেবতাদের সমবেত তেজের মিলনে আবিভর্‚ত হবে এক নারী মূর্তি। সেই নারীই বিনাশ করবে মহিষাসুরকে। বিষ্ণুর থেকে সবকিছু অবগত হয়ে দেবতারা হিমালয়ের পাদদেশে পুণ্যসলিলা গঙ্গার সামনে এসে প্রার্থনা শুরু করেন। দেবতাদের সম্মিলিত তেজরাশি থেকে দশ দিক আলোকিত করে আবিভর্‚ত হন এক নারী মূর্তি। ইনিই দেবী দুর্গা নামে অভিহিত। তিনি আবিভর্‚ত হন দশভুজারূপে। দেবতাদের সব দুর্গতি বিনাশ করায় দুর্গা দুর্গতিনাশিনী, মহিষমর্দিনী এবং অসুরদলনী নামেও পরিচিত। বৈদিক সূত্রে এ দেবীর উল্লেখ আছে। পুরাকালে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল বসন্তকালে। এ সময় দেবী দুর্গা ‘বাসন্তী’ নামে পূজিত হতেন, যা এখনো প্রচলন আছে।

পূজা মানেই আনন্দ, পূজা মানেই উৎসব। ধর্ম আলাদা হলেও উৎসব আর আনন্দ সবার। ঈদের সময় ধর্মভেদে সবাই যেমন আনন্দ উপভোগ করে, ঠিক তেমনি পূজার ক্ষেত্রেও নিজ নিজ ধর্মকে পাশে রেখে একসঙ্গে সময় কাটায়, আনন্দের পসরা সাজায় মানুষ। আর এটি যেমন বাংলাদেশের জন্য সত্য, তেমনি সত্য পৃথিবীর অন্য সব দেশের ক্ষেত্রেও।

প্রচলন অনুযায়ী পূজা হলেও এ বছরটি হবে ব্যতিক্রম। আমার কাছে এ বছরের পূজাটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করি। কথায় বলে, হিন্দু ধর্ম চলে আচারে। করোনার কারণে বারবার হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এগুলো হবে উপাসনার নিয়মানুবর্তিতা। তবে এবার উৎসব হবে আনন্দ হবে না- এমনটাই অভিমত অনেকের। স্মরণকালের প্রথম এমন পূজায় হয়তো আমরা অনেকেই হতবাক ও বিচলিত। এবারের পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, ভক্ত-পূজারি ও দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রেখে, মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, নারী-পুরুষের যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থা করে, বেশিসংখ্যক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নারী-পুরুষ রেখে, ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান না বাজিয়ে, সব ধরনের আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করে, প্রতিমা নিরঞ্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

বছরের একটিবার তবুও এমন বাধা-নিষেধে হয়তো অনেকে বিচলিত। কিন্তু ভাবতে হবে প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। একটু সচেতনতা বাঁচিয়ে দিতে পারে বড় ভয়াবহতা। আমরা দেখেছি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা কীভাবে পালিত হয়েছে? তাই আনন্দ কম হোক, তবুও দেশ ও বিশ্ব থেকে করোনা নামক অশুভ বিদায় হোক। মায়ের মহিমান্বিতরূপে জগতে আসুক শান্তির ছায়া। প্রাণে ফিরে পাক নির্মল আনন্দ। নির্মল পৃথিবী ও বিশুদ্ধ বাতাসের সঙ্গে সবার মাঝে আবারো পূর্বের ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হোক। সবাই মিলে বাজাই প্রাণের সানাই, শারদীয় শুভেচ্ছা সবাইকে জানাই।

সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App