কোন্দলের বেড়াজালে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৭ এএম
গঠন হয়নি আওয়ামী লীগের ১৭ উপকমিটিও অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ৮ টিম
গত বছর জাতীয় সম্মেলনের আগে ৩১টি জেলা ইউনিটে সম্মেলন হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলেও গত ১১ মাসে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগভিত্তিক ১৭ সম্পাদকীয় উপকমিটি গঠিত হয়নি। নানা জটিলতায় আটকে আছে এসব কমিটি। জেলায় জেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে নেই বনিবনা। কোনো কোনো জেলায় দুই নেতা একমত হতে না পারায় সমন্বিত কমিটি জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। কেউবা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে পৃথকভাবে কমিটি জমা দিয়েছেন। যেসব কমিটি জমা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। দলটির ওয়ার্কিং কমিটির সভা থেকে সেসব যাছাই-বাছাইয়ে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ৮টি বিভাগীয় টিম অভিযোগ নিষ্পত্তি করবেন। এরপর দলীয় প্রধান ৭৫ সদস্যের জেলা ও মহানগর ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেবেন।
জানা গেছে, ৩১টি জেলা ইউনিটের মধ্যে কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ কমিটি জমা হয়েছে। কমিটি গঠনে মাইম্যান ও অনুপ্রবেশকারী যেন না থাকে- সেটা নিশ্চিত করতে বলেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ৩ অক্টোবর গণভবনে ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তিনি বলেন, তৃণমূলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দুর্দিন-দুঃসময়ের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের ঠাঁই দিতে হবে। কোনো নেতা বা এমপির প্রভাবে কমিটি করা যাবে না। ছাত্রদল-যুবদল, শিবির, ফ্রিডম পার্টি করা লোকজন কমিটিতে ঢুকবে আর আমার দলের জন্য যারা ঝুঁকি নিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা জায়গা পাবেন না- তা হবে না। ঐদিন তিনি রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, নরসিংদীসহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে নতুন করে কমিটি করার নির্দেশ দেন। এরপর ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত কমিটি এখনো খুব একটা কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার বলেছেন, শিগগিরই জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হবে। এখন কমিটি যাচাই-বাছাই চলছে। কমিটির কোনো বিষয়ে অভিযোগ থাকলে প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কাঠামোর আওতায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া যাবে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে নিষ্পত্তি করবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রস্তাবিত কমিটির বেশির ভাগ জেলা থেকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। তিনি বিভাগওয়ারি কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের যত অভিযোগ, তা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখব। জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে জানব অভিযোগ কতটুকু সত্য। যেসব জেলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে সেসব জেলার সভাপতি-সম্পাদককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
ঠিক কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কখনো আওয়ামী লীগ করেনি, অথচ জেলা কমিটির বড় পদে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেই কমিটিতে জায়গা পেয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেছে- এসব নানা অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বলেও জানান তিনি।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, কমিটি গঠনে জটিলতাগুলো খুবই সাধারণ। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে নানা অভিযোগ থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই নেতৃত্বে আসতে চান। কমিটিতে জায়গা না পেয়ে অভিযোগ করেন। তবে যেসব অভিযোগ পেয়েছি তা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। কমিটিতে নতুন কেউ ঢুকছে কিনা, যারা ঢুকেছে তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস কী, কোনো হাইব্রিড ঢুকেছে কিনা, যোগ্য ও ত্যাগীরা বাদ পড়েছে কিনা- এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মোট কথা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিতে থাকতে পারবে না।
দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, অনেক জেলার কমিটি জমা হয়েছে। প্রস্তাবিত এসব কমিটি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম লিখিত অভিযোগও এসেছে। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে ৮ বিভাগের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম। উনারা এসব অভিযোগ তদন্ত, শুনানি ও নিষ্পত্তি করবেন। ঠিক কী ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, কমিটিতে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটি অভিযোগ আছে। অনেকেই আওয়ামী লীগে একেবারেই নতুন, আগে কোনো পোস্ট-পদবিতে ছিল না। বিভিন্ন সময়ে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন, এরকম কাউকে কাউকে পদায়ন করা হয়েছে- এসব অভিযোগ জমা পড়েছে।