×

জাতীয়

করোনায় দুর্গাপূজায় নেই উৎসবের আমেজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২৫ এএম

করোনায় দুর্গাপূজায় নেই  উৎসবের আমেজ

ছবি: ভোরের কাগজ

বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু আজ ষষ্ঠী সন্ধ্যার পর মণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

প্রতি বছর দুর্গোৎসবকে ঘিরে দেশজুড়ে বইতো উৎসবের আমেজ। পূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হতো তোড়ন। চোখ ধাঁধানো মণ্ডপের সাজসজ্জা, আলোর রোশনাই নিয়ে হতো প্রতিযোগিতা। পূজা ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় বসত মেলা। রাতভর মণ্ডপ মণ্ডপ ঘুরে প্রতিমা দর্শন, মণ্ডপগুলোতে ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়- এসবই ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের চিরচেনা দৃশ্য। কিন্তু এ বছর দুর্গোৎসবকে ঘিরে থাকছে না এমন কিছুই। শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আর হৃদয়ের ভক্তিটুকু দিয়েই চলছে দেবী বন্দনার আয়োজন। কারণ অদৃশ্য করোনা ভাইরাস অনেক আগেই স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটিয়েছে। এবার উৎসবের আয়োজনেও বাধ সেধেছে।

দুর্গাপূজাকে ঘিরে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার এলাকা সব সময়ই জমজমাট থাকে। কিন্তু গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর অস্থায়ী মণ্ডপের কাজই এখনো শেষ হয়নি। শাঁখারীবাজার শনিমন্দিরের উল্টো দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের পূজামণ্ডপ। ৪৯ বছর ধরে এই ক্লাব পূজা করে আসছে। প্রতি বছরই একটি থিমকে প্রাধান্য দিয়ে মণ্ডপ ও প্রতিমা সজ্জা করে থাকে ক্লাবটি। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক উৎপল কুমার ঘোষ শেখর ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছরই আমরা এক একটি থিমকে কেন্দ্র করে প্রতিমা নির্মাণ করি। সেই অনুযায়ী মণ্ডপের সজ্জা হয়ে থাকে। এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে তা হচ্ছে না। প্রতিবার আমরা দুর্গোৎসব করে থাকি। এ বছর করছি দুর্গাপূজা। এ বছর দেবীর কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা- করোনামুক্ত পৃথিবী।

রমাকান্ত নন্দী লেনের (ঘি পট্টি) রাস্তার ওপর অস্থায়ী মণ্ডপে প্রতিমা তোলা হলেও সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়নি এখনো। শিশুরা সেখানে জটলা পাঁকিয়ে সেই কাজ দেখছে। এর পাশেই বাঁধন শিল্পালয়ে কয়েকজন বসে পুঁতি দিয়ে তৈরি করছেন প্রতিমার জন্য গয়না, মুকুট। সেখানে কর্মরত রবিন ঘোষ জানান, অন্যান্য বছর অনেক কাজের অর্ডার পেলেও এ বছর তা অনেকটাই কম। কারণ হিসেবে জানালেন, অনেকেই নিয়ম রক্ষার্থে ঘটপূজা করছেন। প্রতিমার আকারও ছোট হয়েছে।

শাঁখারীবাজার দুর্গামন্দিরের পাশে অস্থায়ী মণ্ডপে পূজার আয়োজন করেছে সূর্যতারা পূজা কমিটি। মণ্ডপের কাজ রাতের মধ্যে শেষ করে আজ প্রতিমা তোলা হবে বলে জানান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত বাদল দত্ত। সরেজমিনে দেখা গেছে, শাঁখারী ও তাঁতীবাজারের অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে এখনো অনেকটা কাজ বাকি। আজ থেকে এসব মণ্ডপে তোলা হবে প্রতিমা। ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত সাত দিন পর আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। কিন্তু এ বছর আশি^ন মাস মলমাস হওয়ায় কার্তিক মাসে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী গতকাল সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হয় দেবী দুর্গার বোধন। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হয় বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। আজ বৃহস্পতিবার ২২ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ অক্টোবর সপ্তমী, ২৪ অক্টোবর অষ্টমী, ২৫ অক্টোবর নবমী এবং ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই আয়োজন। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গলোকে বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির মধ্যেও সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। ঢাকা মহানগরীতে এবার দুর্গাপূজা হবে ২৩২টি মণ্ডপে। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সন্ধ্যারতি বা সন্ধ্যার পর সর্বসাধারণের জন্য দুর্গাপূজার মন্দির ও পূজামণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করোনা মুক্তির জন্য মহাসপ্তমীর দিনে ১২টা ১ মিনিটে দেবীর কাছে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজার দিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। একই সময়ে ‘মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’ ও ‘শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির’ নামের দুটি ফেসবুক পেইজ থেকে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বাড়িতে বসেই এবার ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারবেন।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, করোনার সংক্রমণের কারণে এ বছর আতশবাজি, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না। জনসমাগম বন্ধ করতে এমনকি মন্দিরে মন্দিরে বিতরণ হবে না পূজার প্রসাদ খিচুড়িও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App