×

সারাদেশ

মাদ্রাসায় বাড়ছে যৌন নিপীড়ন, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৩৮ পিএম

মাদ্রাসায় বাড়ছে যৌন নিপীড়ন, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

ফাইল ছবি

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের মাধ্যমে মাদ্রাসার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তারও হয়েছেন। বিভিন্ন মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নের এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও আগে এসব খবর গণমাধ্যমে আসত না।

বিকৃত মানসিকতার যৌনাসক্ত এসব শিক্ষকদের কামনার বলি হচ্ছে এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এখন সারা দেশে ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সোচ্চার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে বেশি প্রকাশিত হচ্ছে। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরাও চিন্তিত। যৌন নিপীড়ন বন্ধে করণীয় ঠিক করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, নারীর প্রতি সব চাইতে ঘৃন্য, নিকৃষ্টতম ঘটনা হচ্ছে ধর্ষণ। একইভাবে শিশুদের প্রতি বিকৃত রুচির মানুষ রুপি নরপশুদের জঘন্যতম ঘটনা বলাৎকার, যা নিরবে-নিভৃতে নিয়মিত সংগঠিত হচ্ছে। জঘন্যতম অপরাধ ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইনের সংশোধন আনা হয়েছে। বলাৎকারের অপরাধীর ক্ষেত্রে সম শাস্তির বিধান নয় কেন? বলাৎকার বা শিশুদের যৌন নিপীড়নের জঘন্য অপরাধ রোধে কঠিন শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন জরুরি।

তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে মানুষরূপী নরপশুরা অবুঝ শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে আসছে। এখন সময় এসেছে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। নজরদারি ও তদারকি বাড়ানো জরুরি।

মানবাধিকার কর্মী ও সামাজিক সংগঠন পিপলস ভয়েস’র শরীফ চৌহান ভোরের কাগজকে বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব বোর্ড বা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেখানেও ঘাটতি আছে। মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ-তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মঙ্গলবার দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মাকসুদুর রহমান (২৪) ও মামুনুর রশিদ (৩২)। নগরীর পতেঙ্গা মুসলিমাবাদের জমিয়তুল মদিনা এবতেদায়ি মাদ্রাসার গ্রেপ্তার এই দুই শিক্ষকের বাড়ি ফেনীতে। তারা মাদ্রাসা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পতেঙ্গা থানার ওসি জোবাইর সৈয়দ বলেন, সোমবার রাতে পাশের বাসার ওই শিশুকে ফুঁসলিয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন শিক্ষক মাকসুদুর রহমান। তাকে অপর শিক্ষক মামুনুর রশিদ সহায়তা করেন। পরে ওই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হলে মঙ্গলবার সকালে ওই মাদ্রাসা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার করে আসা রাঙ্গুনিয়ার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের কাছে অকপটে শিকারও করেছেন তার দীর্ঘদিনের অপকর্মের কথা। বলাৎকারের শিকার চারজন শিশু আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তাদের ওপর নাছিরের নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। নাছির কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলাধীন বেউলা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।

সম্প্রতি জয়পুরহাট সদর উপজেলায় একটি নুরানী মাদ্রাসায় চারজন কন্যাশিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মাদ্রাসাটির শিক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জয়পুরহাটের ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।

এর মধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় একটি মহিলা আবাসিক কওমী মাদ্রাসায় ১৩ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাটির হোস্টেল সুপারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকদিন আগে। ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মাদ্রাসার দু'জন ছাত্রকে বলাৎকার করার অভিযোগে সেই মাদ্রাসার একজন শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App