×

শিক্ষা

বিতর্কিত শিক্ষকের অধীনে এমফিল-পিএইচডি গবেষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২০, ১১:০৪ এএম

বিতর্কিত শিক্ষকের অধীনে এমফিল-পিএইচডি গবেষণা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (ফাইল ছবি)

গবেষণাকাজে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কিছু বিতর্কিত শিক্ষক গবেষণার তত্ত্বাবধান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যেমন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তেমনি সিন্ডিকেটের সাজাপ্রাপ্ত বিতর্কিত শিক্ষকদের অধীনে যারা গবেষণা করছেন তাদের গবেষণাকর্ম নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। নিয়মবহিভর্‚তভাবে বিতর্কিত শিক্ষকদের উচ্চতর গবেষণাকর্মের দায়িত্ব পালনকে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্রমতে, চবির নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষক পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হলে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের সুপারভাইজার হতে পারবেন না। কিন্তু সেই বিধি লঙ্ঘন করেই চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদের বিরুদ্ধে উচ্চতর গবেষণার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে। ১২ বছর আগে ২০০৮ সালে ড. ফরিদ উদ্দিনকে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের দায়ে শাস্তি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এ সংক্রান্ত নথি ভোরের কাগজে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে মাত্র কয়েক মাস আগেই দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক ড. ফরিদ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনকে দুদক অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের গবেষণার নীতিমালার ১১নং ধারার (চ)- তে উল্লেখ আছে, একাডেমিক এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি করার দায়ে যেসব শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি থেকে অপসারণ/বরখাস্ত করা হয় বা বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় অথবা চাকরিরত অবস্থায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সেসব শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের সুপারভাইজার, যুগ্ম সুপারভাইজার, পরীক্ষা কমিটির কনভেনর বা পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজে নিয়োজিত থাকলে তাদের বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে ৪৫০তম সিন্ডিকেট সভায় ‘অনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবহিভর্‚ত কাজ’ করা, বিভাগের একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘন করার দায়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে পরীক্ষা সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম থেকে ৫ বছরের জন্য অব্যাহতির পাশাপাশি বিভাগের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপরও নিয়মবহির্ভূতভাবে সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি, যা সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদের তত্ত্বাবধানে একজন গবেষক এমফিল ও তিনজন পিএইচডি করছেন। এরমধ্যে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া রেহানা এমফিল ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাজরীন-এ-জাকিয়া, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস পিএইচডি করছেন। অন্যজন হচ্ছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনা বেগম। তার পিএইচডির কো-সুপারভাইজার হিসেবেও আছেন ড. ফরিদ উদ্দিন। সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা সত্ত্বেও ড. ফরিদ উদ্দিন সুপারভাইজার হিসেবে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। এ ব্যাপারে চবির উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং সে অনুযায়ী শাস্তি পান, তাহলে ওই শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের আজীবন সুপারভাইজার হতে পারবেন না। তাহলে ড. ফরিদ উদ্দিন কিভাবে সুপারভাইজার হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে দায়িত্ব নিয়েছি, এসব কর্ম তারও আগে থেকে চলছে। তবে নিয়মানুযায়ী তিনি সুপারভাইজার হিসেবে থাকতে পারেন না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মনিরুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, নিয়মানুযায়ী এটা অবৈধ। স্পষ্ট নিয়ম আছে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের কেউ একবার সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের সুপারভাইজার হতে পারবেন না। অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন কিভাবে সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন তা আমাদের দেখতে হবে এবং আইন অনুযায়ী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের গবেষণাকর্মে দায়িত্ব পালনে বিব্রত চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. এনএম সাজ্জাদুল হক। তিনি বলেন, যতটুকু জানি এসব হয়েছে বিগত উপাচার্যের সময়ে এবং তার অনুমতিক্রমেই। সুতরাং বিষয়টি বেশ জটিল। তবে এসব অভিযোগকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যা ২০১২ সালেই শেষ হয়ে যায়। সুতরাং এরপরে এমফিল এবং পিএইচডি গবেষণার সুপারভাইজার হতে কোনো বাধা নেই। তাই যারা এসব প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তারা মূলত আমার সুনামহানির জন্যই এসব করছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App