×

জাতীয়

পদ্মা সেতু রেল লিংকের অগ্রগতি মাত্র ২৬ ভাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫৩ এএম

পদ্মা সেতু রেল লিংকের অগ্রগতি মাত্র ২৬ ভাগ

পদ্মা সেতু (ফাইল ছবি)

নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতু লিংক রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশের ওপরে। আর রেল লিংক প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ। আবার রেলকে সেতুর ওপর তুলতে রেলওয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার রেলপথের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চালুর সঙ্গে ট্রেন চালুতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে বাস ও ট্রেন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সে হিসেবে আর মাত্র ১ বছর ৮ মাসের মধ্যে পদ্মা লিংক রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং বাস ট্রেন একই দিনে চলাচল করবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক ও চ্যালেঞ্জের প্রকল্প পদ্মা সেতু ও পদ্মা লিংক রেল প্রকল্প। বিশ্ব ব্যাংক অকারণে বদনাম দিয়ে অর্থ সহায়তা থেকে সরে আসার পরে প্রধানমন্ত্রী এটিকে চ্যালেঞ্চ হিসেবে নিয়ে দেশীয় ও চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থে কাজ শুরু করেন। মাওয়া ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার পদ্মা লিংক রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। এ বিষয়ে পদ্মা লিংক রেল প্রকল্পের পরিচালক ফখরুদ্দীন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২৬ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৯০ ভাগ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশে মাটি ভরাট হয়েছে। তবে রেল চলাচল উদ্বোধনের জন্য মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার রেললাইনের কাজের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। এই অংশে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বন্যা ও করোনা, জমি অধিগ্রহণ। সে কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। তাছাড়া মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে অতিবর্ষণে নিচু জমিতে। যেখানে বসতবাড়ি, খাল, নদী, বাজার ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রেল পথ বসানোর কারণে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সম্পতি প্রকল্পটির অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় অল্পসময়ে ৫১ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে মূল পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশের ওপরে। আর রেল লিংকের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। আর রেলপথের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। এখনো ভ‚মি অধিগ্রহণে রয়েছে জটিলতা, মাটি ভরাটের কাজও চলছে শ্লথ গতিতে, সে কারণে এই অল্প সময়ের মধ্যে এ টুকুর কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া, গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর। সম্প্রতি রেল লিংকের ভায়াড্রাক্টের উচ্চতা ও ব্যাসার্ধ নিয়ে কিছু ত্রæটি ধরা পড়ার বিষয়ে ফখরুদ্দীন বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়াররা মিলে আমরা উচ্চতার সমস্যা সমাধান করে ফেলেছি। আর দুটি পিলারের সমস্যা সমাধানের জন্য বুয়েটে নকশা পাঠানো হয়েছে। তারা এখনো মতামত দেয়নি। তাদের মতামত নিয়ে সবকিছু দ্রুত সমাধান করা হবে। এ বিষয়ে বুয়েটের প্রফেসর ড. শামসুল হক জানান, সমন্বয়হীনতার কারণে রেল লিংক প্রকল্পের নকশায় ত্রæটি হয়েছে। যদি সমন্বিতভাবে কাজটি করা হতো তাহলে এ সমস্যা থাকত না। তবে আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে রেল লিংক প্রকল্পের প্রকৃত অবস্থা পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল হক সুজন ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী বলেন, পদ্মা লিংক রেল প্রকল্পের সবটুকু কাজ শেষ না হলেও মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে রেললাইনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। রেললাইনের ভায়াড্রাক্টের ত্রু টি দ্রুত সংশোধন করা হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে যখন গাড়ি চলবে তখন ট্রেনও চলবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ শেষ হবে, বাকি কাজ অর্থাৎ ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত অন্য তিন পর্যায়ের কাজ পরের ফেজে ২০২৪ সাল নাগাদ সম্পন্ন করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০০৭ থেকে ২০১৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদন হয়েছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পটি। প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে প্রথমবার প্রকল্পটির সংশোধন আনা হয়। নকশা পরিবর্তন করে দৈর্ঘ্য বাড়ানো, রেললাইন সংযোজনসহ আনুষঙ্গিক কাজ বাড়িয়ে নির্মাণব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। অপরিবর্তিত রাখা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ। বাস্তবায়ন কাজ বিলম্ব হওয়ায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ব্যয় বাড়ানো হয় দ্বিতীয় দফায়। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় ডিপিপি সংশোধন করা হয়। তবে নকশা জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় ২০১৮ সালের জুনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ডিপিপি তৃতীয়বার সংশোধন করা হয়। নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পরের বছর ফের ডিপিপি সংশোধন করে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রেল সংযোগ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। ব্যয় বেড়ে হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে আবারো ব্যয় বাড়িয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ বছরে আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ, আর বাস্তব অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত মেয়াদ অনুসারে, আগামী ৪ বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App