×

জাতীয়

নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩৮ এএম

নৌশ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

ফাইল ছবি

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে দেশজুড়ে নৌপথে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, খাদ্যভাতা, নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে গত সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় লাইটারেজ, কার্গো, বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী সব নৌযান। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে কয়েক হাজার জাহাজ অলস বসে আছে। এদিকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পণ্যবাহী নৌযান মালিকরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্টো ৬ দফা দাবি পেশ করে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম সারোয়ার আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক এ টি এম রাশেদ বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের নেতারা জানান, কথায় কথায় শ্রমিকদের কাছে আর জিম্মি থাকবেন না তারা। প্রয়োজনে জাহাজ পরিচালনা বন্ধ রাখবেন। জাহাজ মালিকদের অন্য দুই সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কোস্টাল ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনও প্রায় একই সুরে কথা বলছে। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় চলে গেছে দেশের তিন বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের খাদ্যভাতা ২ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে নিজেদের জাহাজ চালানোর কথা জানিয়েছে বসুন্ধরা, তীর ও আবুল খায়ের গ্রুপ। রাজধানীর বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, শ্রমিকদের এ ধর্মঘটের কোনো বৈধতা নেই। কারণ, এ নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। এছাড়া ২০১৬ সালে শ্রমিকদের জন্য সরকার যে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটিও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর। আসলে শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে কিছু নামধারী নেতা কথায় কথায় মালিকদের জিম্মি করে ফেলছে। প্রকৃত শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। নিজেদের সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের জাহাজগুলো ট্রিপ পায় না। আয় নেই। ২-৩ মাস ধরে বেতন দিতে পারছি না। এরপরও এসব দাবি মেনে নিলে ব্যবসা করা তো দূরের কথা, অন্য খাত থেকে টাকা এনে এখানে দিতে হবে। কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ শ্রমিকদের খাদ্যভাতা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি তাদের ব্যাপার। নিজের জাহাজে নিজেদের পণ্য আনে তারা। আবার কোনো নিয়মকানুনও মানে না। তাদের মূল ব্যবসার প্রয়োজনে তারা অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু আমাদের তো জাহাজ ভাড়া দিয়েই চলতে হয়। দেশে প্রায় ৫ হাজার পণ্যবাহী জাহাজের মধ্যে তাদের মাত্র কয়েক’শ জাহাজ রয়েছে। ঘাটগুলোতে অপেক্ষায় মাদার ভেসেলগুলো : বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘটে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘাটগুলোতে ১ হাজার ৬০০ লাইটার জাহাজ পণ্য ওঠানামা বন্ধ রেখেছে। এতে বহির্নোঙর থেকে ঘাটগুলোতে পণ্য ওঠানামার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাদার ভেসেলগুলো পণ্য খালাসে গুনছে অপেক্ষার প্রহর। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার জাহাজে পণ্য ওঠানামা চলছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ভ‚ঁইয়া ভোরের কাগজকে জানান, ২০১৮ সাল থেকে শ্রমিকরা ১১ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। গত বছর তিনবার এই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে। মালিকপক্ষ ও সরকার প্রতিবারই প্রতিশ্রæতি দিয়ে তা রক্ষা করেনি। এবার আরো কঠোর কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্যপরিষদের সহসভাপতি মো. নবী আলম বলেন, ১১ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলমান থাকবে। নৌশ্রমিক ধর্মঘটে বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও কন্টেইনার জেটিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওঠানামার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ধর্মঘটের প্রভাব জেটিতে পড়েনি। এখানে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্যপরিষদ। ওই অনুষ্ঠান থেকেই সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী বেতন দেয়া, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস, খাদ্যভাতা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ প্রভৃতি রয়েছে। এ নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন ও শ্রমিক নেতারা এতে অংশ নেন। সভায় নৌযান মালিকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা অংশ নেননি। গতকাল সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটের কারণে কোনো লাইটার জাহাজ বহির্নোঙরে যায়নি। এমনকি আগে থেকে পণ্য খালাসে থাকা জাহাজগুলোও খালাস শেষ না করেই ধর্মঘট পালন করে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App