×

সাহিত্য

পটুয়াখালীতে পাঁচ হাজারে প্রণোদনা পেলেন মাত্র ৯০!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২০, ১১:১৭ এএম

পটুয়াখালীতে পাঁচ হাজারে  প্রণোদনা পেলেন মাত্র ৯০!

করোনাকালে আজ আর উপভোগ করা হয় না এমন নান্দনিক গীতিনাট্য -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- ২৫

পটুয়াখালী জেলাকে বলা হয় সাগরকন্যা। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে পর্তুগিজ জলদস্যুরা এই খালের পথ দিয়ে এসে নির্বিচারে অত্যাচার, হত্যা ও লুণ্ঠন চালাত। স্থানীয় লোকেরা এই হানাদারদের ‘নটুয়া’ বলতো। তখন থেকে এই খালকে ‘নটুয়ার খাল’ নামে ডাকা হতো। কথিত আছে, ‘নটুয়ার খাল’ থেকে পরবর্তী সময়ে এর নামকরণ হয়েছে পটুয়াখালী। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এই শহরেও ঢুকে পড়েছে করোনা! সূত্র জানায়, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ষাটের কাছাকাছি। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫ হাজারের মতো। এদের মধ্যে অনেকে যাত্রা, বাউলসহ নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে যুক্ত এবং যারা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠান করেই সংসার চালান। তারা বেকার হয়ে গেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে মাত্র ৯০ জনকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে। অনেক শিল্পীই বাদ পড়ে গেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পটুয়াখালীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনও অন্য জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ছবির মতোই মলীন। এখানে অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই কাটছে অসহায়তার মধ্যে। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ অটোরিকশা কিংবা পেয়ারার চাটনি বিক্রি করছেন। করোনাকালে এসব বিপন্ন শিল্পীদের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদান সমভাবে বণ্টনও হয়নি। বরং প্রশাসনের লোকজন একতরফাভাবে নিজেদের মধ্যেই বণ্টন করেছে। যেখানে শিল্পীদের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে। অবিলম্বে অগ্রাধিকারভিত্তিতেই শিল্পীদের অনুদান সহায়তার পাশাপাশি নতুন তালিকা করে দুস্থ শিল্পীদের দিকে সহযোগিতার বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। পটুয়াখালী সাগরকন্যা শিল্প অঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা ও শিল্পী মো. আবুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, পটুয়াখালীতে যারা গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের অনেকেই বেকার হয়ে গেছেন। অনেকে অটো রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ কেউ পেয়ারা আর আমড়ার চাটনি বিক্রি করছেন। চেনা কাউকে দেখলে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছেন! শিল্পীরা এভাবে পেশা থেকে ছিটকে পড়লে তাদের আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। পটুয়াখালী শিল্পকলার সাংষ্কৃতিক কর্মকর্তা বলেন, বাকি যাদের সহায়তা দেয়ার কথা ছিল তাদের আর দেয়া হবে না। কারণ করোনা শেষ হয়ে গেছে। সংগীতশিল্পী ও প্রশিক্ষক বাদল দাশ বলেন, গান গেয়ে আর গান শিখিয়ে আমি টিকে আছি। কিন্তু করোনার কারণে আমার আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও শিল্পকলা থেকে নাম এবং ছবি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো অনুদান পাইনি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি বলেন, পেশাজীবী সংগীতশিল্পীদের পাশাপাশি যাত্রাশিল্পী ও বাউলশিল্পীরা চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকার যা প্রণোদনা দিয়েছে তা-ও অপ্রতুল এবং প্রণোদনা সহায়তা থেকে বাদ পড়া শিল্পীদেরও অন্তর্র্ভুক্ত করে এই সহায়তা আরো বাড়ানো উচিত। পটুয়াখালী জেলা উদীচীশিল্পী গোষ্ঠীর সহসভাপতি নাসরিন মোজাম্মেল এমা বলেন, পটুয়াখালীর শিল্পীদের মধ্যে সরকারি প্রণোদনা সঠিকভাবে সমবণ্টনই হয়নি। প্রকৃত শিল্পীরা বাদ পড়ে গেছে! আর অনেকে হাহাকার করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সংগঠক আরো বলেন, একজন মুচি, যিনি ঢোলও বাজিয়ে থাকেন। করোনার কারণে তিনি সংকটে পড়ে গেছেন। বলেছিলাম, প্রণোদনার তালিকায় তার নামটা যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তাকে দেয়া হয়নি। পটুয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার কাজী কামরুজ্জামান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ৯০ জনের তালিকা চেয়েছিল। আমরা শুধু ৯০ জনেরই তালিকা পাঠিয়েছি। সে অনুযায়ী বণ্টন করেছি। এ ছাড়া আরো ৪০ জনের আরেকটা তালিকা পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App