×

জাতীয়

নৌ-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পন্য পরিবহনে অচলাবস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৪৯ পিএম

নৌ-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পন্য পরিবহনে অচলাবস্থা

ফাইল ছবি

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে দেশজুড়ে নৌপথে পন্য পরিবহনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকার ঘোষিত মুজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, খাদ্য ভাতা, নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে গত সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় লাইটারেজ, কার্গো, বাল্ডহেডসহ পন্যবাহী সব নৌযান। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরে কয়েক হাজার জাহাজ অলস বসে আছে।

এদিকে, শ্রমিকদের এসব দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পণ্যবাহী নৌযান মালিকরা। বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্টো ৬ দফা দাবি পেশ করে। সংগঠনের নেতারা জানান, কথায় কথায় শ্রমিকদের কাছে আর জিম্মি হয়ে থাকবেন না তারা। প্রয়োজনে জাহাজ পরিচালনা বন্ধ রাখবেন। জাহাজ মালিকদের অন্য দুই সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনও প্রায় একই সুরে কথা বলছে। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় চলে গেছে দেশের তিন বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা ২ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে নিজেদের জাহাজ চালানোর কথা জানিয়েছে বসুন্ধরা, তীর ও আবুল খায়ের গ্রুপ।

রাজধানীর বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, শ্রমিকদের এ ধর্মঘটের কোনো বৈধতা নেই। কারণ, এ নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। এছাড়া ২০১৬ সালে শ্রমিকদের জন্য সরকার যে মুজুরি কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটিও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর। তিনি বলেন, আসলে শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে কিছু নামধারী নেতা কথায় কথায় মালিকদের জিম্মি করে ফেলছে। প্রকৃত শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। নিজেদের সমস্যা তুলে ধরে নুরুল হক বলেন, আমাদের জাহাজগুলো ট্রিপ পায় না। আমাদের আয় নেই, ২-৩ মাস ধরে বেতন দিতে পারছি না। এরপরও এসব দাবি মেনে নিলে ব্যবসা করা তো দূরের কথা, অন্য খাত থেকে টাকা এনে এখানে দিতে হবে।

কয়েটি ব্যসায়ায়িক গ্রুপ শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি তাদের ব্যপার। নিজের জাহাজে নিজেদের পন্য আনে তারা। আবার কোনো নিয়ম কানুনও মানে না। তাদের মূল ব্যবসার প্রয়োজনে তারা অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু আমাদের তো জাহাজ ভাড়া দিয়েই চলতে হয়। তাই না পোষালে আমরা টিকতে পারব না। দেশে প্রায় ৫ হাজার পন্যবাহী জাহাজের মধ্যে তাদের মাত্র কয়েক’শ জাহাজ রয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম সারোয়ার আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ টি এম রাশেদ বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদফতরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী বেতন দেয়া, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস, খাদ্যভাতা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ প্রভৃতি রয়েছে।

এ নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন ও শ্রমিক নেতারা এতে অংশ নেন। সভায় নৌযান মালিকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা অংশ নেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App